নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। তার সঙ্গেই শিলং, পুনে এবং নাগপুরে সিবিআই-এর নতুন অফিসের উদ্বোধন করেন তিনি।  


বক্তব্য রাখার সময় দুর্নীতি প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে তাঁর সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, 'এই দেশের এবং এই দেশের নাগরিকের ইচ্ছে' যে কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না। মোদির মতে, 'দুর্নীতি কোনও ছোটও অপরাধ নয়। এটা গরিবদের অধিকার কেড়ে নেয়। যা পরে বহু অপরাধী জন্ম দেয়।'


কালো টাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা বারবার বলেছেন মোদি। নোটবন্দির অন্যতম কারণ হিসেবেও কালো টাকা উদ্ধারের কথা বলা হয়েছিল। এদিনও বক্তব্য় রাখার সময় সেই প্রসঙ্গই তুলে এনেছেন তিনি। মোদি বলেন, তাঁর সরকার কালো টাকা ও বেনামি সম্পত্তি উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের আশা ও শক্তি হিসেবে কাজ করছে সিবিআই। সেই কারণেই সুবিচার পাওয়ার আশায় সাধারণ নাগরিক সিবিআই তদন্ত চাইছে।


দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইকে 'পূর্ণ স্বাধীনতা' দেওয়ার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কারও বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছেন, তাঁরা খুবই ক্ষমতাবান তাঁরা বহু বছর ধরে সরকার বা সিস্টেমের অংশ হয়ে ছিলেন। অনেক রাজ্যে এখনও তাঁরা ক্ষমতায় আছেন। তাঁরাও তাঁদের দুর্নীতি লুকোতে একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করেছেন। নিজেদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে তাঁরা এজেন্সিকেই আক্রমণ করেন। তাঁরা আপনাদের মনোসংযোগ নষ্ট করতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু আপনারা নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকুন। একজন দুর্নীতিগ্রস্তও যেন বাঁচতে না পারে।'


এখন সিবিআইয়ের হাতে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। বিশেষ করে বাংলায় একাধিক দুর্নীতির মামলা সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে। ওই মামলাগুলোয় ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের হাতে একাধিক গ্রেফতার হয়েছে। এর মাঝেই বিভিন্ন তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিবিআই। আবার অন্যদিকে, বারবার বিজেপিশাসিত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি-কে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। তৃণমূল প্রথম থেকেই এই সুরে আক্রমণ শানিয়েছে। এমন আক্রমণ শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও। ঠিক সেই আবহেই মোদির মুখে শোনা গেল এমন কথা। সব ঠিক থাকলে কদিন পরেই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট। আগামী বছরেই লোকসভা নির্বাচন।


সিবিআইয়ের ভূয়সী প্রশংসা:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন জানান, সিবিআইয়ের মতো পেশাদার ও দক্ষ সংস্থা ছাড়া ভারত এগোতে পারবে না। তিনি বলেন, 'ব্যাঙ্ক প্রতারণা থেকে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ, সিবিআইয়ের কাজ বহুমুখী হয়েছে। কিন্তু সিবিআইয়ের মূল কাজ হল দেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা।' মোদি বলেন, 'সিবিআই সাধারণ মানুষকে আশা ও শক্তি প্রদর্শন করে। এখনও যখন কোনও মামলা সমাধান হয় না। তখন সেই মামাল সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার কথা হয়। 


এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে পরিবারতন্ত্রকেও এক সারিতে আনেন মোদি। তাঁর মতে, দুর্নীতি মেধার সবচেয়ে বড় শত্রু। তোষণ এবং পরিবারতন্ত্রকে সাহায্য করে এটি। এই দুটি বাড়লে রাষ্ট্রের শক্তি কমতে থাকে, উল্টোদিকে এগুলির উপর আঘাত হানতে পারলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়। 


স্ট্যাম্প প্রকাশ:
সিবিআইয়ের হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে একটি পোস্টাল স্ট্যাম্প এবং একটি মুদ্রা উদ্বোধন করেন।


আরও পড়ুন: এক সপ্তাহেরও কম সময়ে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ, তৃতীয় তরঙ্গের পরে দ্রুততম লাফ