সন্দীপ সরকার, অনির্বাণ বিশ্বাস, শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : প্রত্যেক ভারতীয়র রক্ত ফুটছে। ষড়যন্ত্রকারীদের কড়া জবাব দেবই। পহেলগাঁও হামলা নিয়ে ফের একবার নাম না করে পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাতের হুঙ্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে হুঙ্কার শোনা গেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গলাতেও। জঙ্গিদের খোঁজে ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনা অ্যাকশনে নেমেছে ভূস্বর্গে। কিন্তু প্রত্যাঘাত কবে হবে? সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। 

Continues below advertisement

৩ দিনে ২ বার। বিহারের সভার পর এবার মন কি বাত-এ...। পহেলগাঁওকাণ্ডে ফের নাম না করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে মঙ্গলবারের ভয়ঙ্কর হত্যালীলার নৃশংসতায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। ভয়াবহ জঙ্গি হামলা কেড়ে নিয়েছে ২৬টা প্রাণ। বেছে বেছে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে হিন্দু পর্যটকদের। পাকিস্তানি জঙ্গিদের এই কাপুরুষোচিত হামলার প্রত্য়াঘাত চাইছে গোটা দেশ। রীতিমতো যুদ্ধের মহড়া শুরু করে দিয়েছে তিন বাহিনীর সেনাও। এই পরিস্থিতিতে রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের কড়া শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, "পহেলগাঁওয়ে ওই হামলা, যারা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের হতাশা, কাপুরুষতাকে প্রকাশ করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৪০ কোটি ভারতীয়র পাশে রয়েছে গোটা বিশ্ব। আমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আবার আশ্বাস দিচ্ছি, তারা ন্যায়বিচার পাবে। ন্যায় মিলবেই। এই হামলায় দোষী ও ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোরতম জবাব দেওয়া হবে।"

Continues below advertisement

এর আগে বিহারের সভামঞ্চ থেকে পহেলগাঁও হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, নাম না করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তিনি বলেছিলেন, "আমি সমগ্র বিশ্বকে বলছি, ভারত প্রত্যেক জঙ্গিকে চিহ্নিত করে, খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে এবং তাদের যারা মদত দেয়, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও তাদের ধরে আনা হবে। সন্ত্রাসবাদ কখনই ভারতের প্রাণশক্তি ভাঙতে পারবে না। সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি পেতেই হবে।" একইভাবে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গলায়। 

প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী--হুঁশিয়ারির তালিকা লম্বা হচ্ছে, কিন্তু বদলা কবে নেওয়া হবে? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। জম্মু ও কাশ্মীরের ডোরুর কংগ্রেস বিধায়ক গুলাম আহমেদ মির বলেন, "প্রত্যাঘাতের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এইরকম পদক্ষেপ মোদি সরকার আগেও নিয়েছে। এখন যে পদক্ষেপের ঘোষণা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে বোঝা যাবে তার কতটা কার্যকর হল। সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণে বিষয়টির গুরুত্ব কমে গেছে।"

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, "গত কয়েকদিন ধরে, আমি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্তরের কার্যকলাপের দিকে নজর রাখছিলাম। পহেলগাঁওয়ে এই নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ত্রুটিগুলি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার পরিবর্তে, তারা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে উপকৃত করবে এমন একটি আখ্যানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী বলে মনে হল। এখনই সময় এই ধরনের তুচ্ছ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই সমস্যার চিরতরে সমাধান করার। এটা আবার কোনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদের সময় নয়। ওরা যে ভাষা বোঝে সেই ভাষায় সবক শেখানোর সময় এটা। এটাই পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধারের সময়।"

তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গোটা দেশের ১৪০ কোটি মানুষ, সব বিরোধী দল আপনার পাশে আছি। আপনি পদক্ষেপ নিন। আপনি পদক্ষেপ নিন। কিন্তু ৪-৫ দিন হয়ে গেল কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন কিছু করবেন না যাতে দু'টো ধর্মের মধ্যে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে। গোটা দেশ আপনার সঙ্গে আছে। সব রাজনৈতিক বিরোধী দল আপনার সঙ্গে আছে।" 

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "যারাই অপরাধ ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। এটা করতে গিয়ে রাজনীতির মনোভাব থেকে কাউকে দাগিয়ে দেওয়ার মনোভাব হলে সেটা আমাদের দেশের সংবিধান সম্মত মনোভাব হবে না।"

পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করতে একের পর এক পদক্ষেপ করছে ভারত। কিন্তু কবে দেওয়া হবে কড়া জবাব। সেই অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী।