নয়াদিল্লি: প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বাড়ির গণেশ পুজোয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি নিয়ে এবার বিতর্ক বাধল। দেশের বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল এবার। শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে ইতিমধ্যেই। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি-ও। তাদের দাবি, গণেশ পুজোয় শামিল হওয়া দেশের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। (PM Modi at CJI Residence)


বুধবার রাতেই প্রধান বিচারপতির বাড়ির গণেশ পুজোয় মোদির উপস্থিত থাকার খবর সামনে আসে। একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আরতি করতে দেখা যায় মোদিকে। শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) সাংসদ সঞ্জয় রাউত প্রথম সেই নিয়ে সরব হন।  'সংবিধানের অভিভাবক' রাজনীতিকদের সঙ্গে মেলামেশা করলে মানুষের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। (Indian Judiciary)


সোশ্যাল মিডিয়ায় সঞ্জয় লেখেন, 'সংবিধানের প্রদীপের আলো থেকেই সংবিধানের ঘরে আগুন লেগেছ...১) EVM-কে ক্লিনচিট, ২) মহারাষ্ট্রে সংবিধান বিরোধী একটি সরকারকে নিয়ে তিন বছর ধরে শুনানিই চলছে শুধু, ৩) পশ্চিমবঙ্গের ধর্ষণ মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ, ৪) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন নিয়ে তারিখের পর তারিখ. এসব কেন হচ্ছে? ক্রোনোলজি বুঝে নিন। ভারত মাতা কি জয়!!!'



সঞ্জয় জানান, মহারাষ্ট্র মামলা প্রধান বিচারপতির এজলাসেই ঝুলে রয়েছে। সেই মামলায় বিরোধী পক্ষ মোদি। তাই ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁদের। সব যখন প্রকাশ্যেই এসে পড়েছে, এই মুহূর্তে ওই মামলা থেকে নিজেকে প্রধান বিচারপতির সরিয়ে নেওয়া উচিত বলেও দাবি করেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি আদৌ ন্যায় বিচার করতে পারবেন কি না, প্রশ্ন তোলেন সঞ্জয়। 


শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদিও এ নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, 'উৎসব শেষ হলে আশাকরি প্রধান বিচারপতি সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং মহারাষ্ট্র মামলার শুনানি করার সময় পাবেন, যেখানে সংবিধানের ১০ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। ও হ্যাঁ, নির্বাচন এগিয়ে আসছে, আরও একদিন ফেলে রাখা যেতে পারে মামলা'।



বুধবার দিল্লিতে প্রধান বিচারপতির বাড়ির গণেশ পুজোয় শামিল হন মোদি। প্রধান বিচারপতি এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনা দাস মোদিকে স্বাগত জানান। মারাঠিদের মতো টুপি পরে পুজোয় অংশ নেন মোদি। এর পাল্টা, শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে) শিবির থেকে মিলিন্দ দেওরা বলেন, "প্রধান বিচারপতি বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বিরোধীরা। বিচার ব্যবস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।" 


বিজেপি-র জাতীয় সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ বলেন, "সভ্যতা, সৌহার্দ্য, একতা, সহাবস্থান বামপন্থী উদারমনস্কদের জন্য অশ্লীলতা। এটা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, গণপতি পুজোও হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নীতি নির্ধারণকারী কম্পাস নয়। প্রাণ খুলে শ্বাস নিন।"


শুধু বিরোধী শিবিরই নয়, অভিজ্ঞ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংও প্রধান বিচারপতির বাড়িতে মোদির যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সরকার এবং বিচার বিভাগের মধ্যেকার ক্ষমতার যে বিভাজন, তার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি আপস করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতেই সন্তোষ তাঁকে বামপন্থী বলে আক্রমণ করেন। কিন্তু আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহ তার পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, সন্তোষের মন্তব্যেই পরিষ্কার যে, গেরুয়া দলটি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে পুজো-অর্চনাকেও ব্যবহার করে। 



রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, "প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা শুধুমাত্র তত্ত্বকথা হয়ে থেকে যাওয়া উচিত নয়, তা প্রতিফলিত হওয়াও দরকার। গণপতি পুজোয় শামিল হওয়া অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যে বার্তা যাচ্ছে, তা অস্বস্তিকর। দেশের প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ছাড়েন, সেখানে সত্যিই কিছু বলার থাকে না।"