নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ওই শিক্ষাবর্ষের কোনও রেকর্ডই জনসমক্ষে আনতে হবে না তাদের। প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি নিয়ে বিতর্কে সোমবার এমনই রায় দিল দিল্লি হাইকোর্ট। তবে আবেদনকারীরা এর পর সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন বলে খবর মিলছ। (Delhi High Court)
নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে প্রধানমন্ত্রী মোদি যে তথ্য দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক হন তিনি। তথ্য জানার আইনে সেই নিয়ে তথ্য চাওয়া হলে, আট বছর আগে তা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তথ্য় কমিশন। তথ্য কমিশনের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। গোপনীয়তা রক্ষার দোহাই দেয় তারা। সেই নিয়ে সোমবার শুনানি করতে গিয়ে তথ্য কমিশনের নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে আদালত। (Narendra Modi's Degree Row)
এই ধরনের তথ্য ‘ব্যক্তিগত’ বলে মত আদালতের। আদালতের বক্তব্য, “শিক্ষাবর্ষ সংক্রান্ত তথ্যে অনেক ব্যক্তিগত তথ্যও থাকে। জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত তথ্যও জড়িয়ে এর সঙ্গে। জনস্বার্থও এর ঊর্ধ্বে নয়।” বিচারপতি সচিন দত্তের একক বেঞ্চ বলে, “একজন জনপ্রতিনিধির সম্পর্কে যে তথ্য় চাওয়া হয়েছে, তা গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। জনসাধারণের প্রতি কর্তব্যের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।”'
দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও মানদণ্ড বা পূর্বশর্ত যদি থাকে, সেক্ষেত্রে অবস্থান ভিন্ন হতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষেত্রে এই যুক্তি খাটে না। আদালতের বক্তব্য, "এই মামলাটিতে তথ্য় জানার অধিকার আইনে যে তথ্য যাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে জনস্বার্থ জড়িয়ে নেই। যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র চাওয়া হয়েছে, তা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকা বা দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আইনগত ভাবে প্রয়োজনীয় নয়।"
প্রধানমন্ত্রী মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই চলছে। ২০১৬ সালে তথ্য জানার অধিকারে সেই মর্মে আবেদন জমা পড়ে। সেই সময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, কোনও তৃতীয় পক্ষকে তথ্য দেওয়া নিয়মের পরিপন্থী। কিন্তু কেন্দ্রীয় তথ্য় কমিশন তাদের সেই যুক্তি গ্রহণ করেনি। বরং ওই শিক্ষাবর্ষের রেকর্ড দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তথ্য কমিশনের যুক্তি ছিল, জনপ্রতিবিধি বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যক্তিগত তথ্য় নয়, বরং সরকারি নথি, যা সাধারণ মানুষের দেখার অধিকার রয়েছে বলে জানায় তারা। কিন্তু তথ্য় কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে যায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা জানায়, এর সঙ্গে হাজার হাজার পড়ুয়ার ব্যক্তিগত তথ্য জড়িয়ে রয়েছে, যা তথ্য জানার আইনের আওতায় পড়ে না।
সেই নিয়ে এতদিন ধরে আইনি লড়াই চলছিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আদালতে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। কিন্তু তথ্য জানতে চাওয়া সমাজকর্মীদের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, রাষ্ট্র যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় সিলমোহর দিচ্ছে, তা ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্যতা জনস্বার্থের মধ্যেই পড়ে বলে জানান তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিতেই সায় দিল।
এ নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। দলের সাংসদ জয়রাম রমেশের বক্তব্য, "অন্য জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত তথ্য চিরকালই নাগালের মধ্যে থেকেছে। শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য কেন গোপন রাখা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। ঘটনাচক্রে ছ’বছর আগে ২০০৬ সালের RTI আইনে সংশোধন ঘটিয়ে, আইনটিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়। বিরোধীদের কোনও আপত্তি খাটেনি।"