শ্রীনগর: দীর্ঘ ১০ বছর পর বিধানসভা নির্বাচন জম্মু ও কাশ্মীরে। তার আগে আসন পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে জম্মুতে কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছিল। সেই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে বিজেপি-র পক্ষে ভোট পড়বে না বুঝেই আগেভাগে জম্মুতে আসনসংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বিধানসভার আসন সংক্রান্ত বাড়তি ক্ষমতা তুলে দেওয়া নিয়েও এখন কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। (Jammu & Kashmir Election)


মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা চলছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস-ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট। তারা ৫২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৭টি আসনে। মেহবুবা মুফতির পিপলস্ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দু'টি এবং অন্যান্য রা আটটি আসনে এগিয়ে রয়েছে। সেই আবহে বিধানসভা প্রার্থী পাঠানোর যে ক্ষমতা লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। (Jammu And Kashmir Assembly Elections 2024)


জম্মু ও কাশ্মীরের মোট আসনসংখ্যা ৯০। সেই নিরিখে যে দল ৪৬টি আসনে জয়ী হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তারাই সরকার গঠনের অধিকার পাবে। কিন্তু লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে যে বিশেষ ক্ষমতা তুলে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, তাতে তিনি বিধানসভায় পাঁচ সদস্যকে মনোনীত করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিধানসভায় সরকার গড়ার ম্যাজিক সংখ্যা বেড়ে হবে ৪৮। বিজেপি-কে সুবিধা পাইয়ে দিতেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে এই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। 


২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন নিয়ে আসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার, যাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে শুরুতে বিধানসভায় দু'জন সদস্যকে মনোনীত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি যদি যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা প্রার্থী দাঁড় করায়নি বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলা ছিল। ২০২৩ সালে ওই আইন সংশোধন করে বলা হয়, আরও তিন সদস্যকে মনোনীত করতে পারবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। পরিযায়ী কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবার থেকে দু'জন সদস্য, যার মধ্যে একজন মহিলা এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে বিচ্যুত একজনকে মনোনীত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। বলা হয়, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোনীত পাঁচ সদস্য সমান ভোটাধিকার পাবেন, আস্থাভোটে ভোটদান করা থেকে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ এবং বাজেটেও ভোটদানের অধিকার থাকবে তাঁদের।


লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে বিধানসভার সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা প্রদান ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। আইনকানুন তৈরির ক্ষমতা বিধানসভার। সেখানে রাজ্যপাল কী করে নিজের পছন্দের সদস্য মনোনীত করতে পারেন, প্রশ্ন ওঠে। সপ্তম তফসিলের আওতায় যেখানে মন্ত্রীদের সুপারিশ অনুযায়ী লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে, তাঁর হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দেওয়ার নেপথ্য কারণ ঘিরে নানা দাবি উঠে আসে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচ্চেরীর ক্ষেত্রেও এমন নিয়ম চালু করে মোদি সরকার, যা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয়। যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। 


১০ বছর পর জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের বুথফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স জোটের জয়ের ইঙ্গিত মেলে। আর তাতেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। একার ক্ষমতায় এ যাবৎ কখনও উপত্যকায় ক্ষমতা দখল করতে পারেনি বিজেপি। তাই তাদের বাড়তি সুবিধা করে দিতেই এমন নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিরোধীরা। উপত্যকায় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গোলাম আহমেদ মীর বলেন, "একটি দলকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য সদস্য মনোনীত করার প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক। কোনও আদালত এটায় অনুমোদন দিতে পারে না। সদস্য মনোনয়নের বিষয়টি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়া উচিত। জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি, সমাজকর্মী, যাঁদের কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই, তাঁদের মনোনীত করা যেতে পারে।"


ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা রতনলাল গুপ্ত বলেন, "একটি অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। এই ধরনের ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের থাকতে পারে, রাজ্যপালের নয়। আইন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা, যার মধ্যে বিধায়ক মনোনীত করার ক্ষমতাও নির্বাচিত সরকারের হাতেই ন্যস্ত থাকা উচিত। নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে।"


আসন পুনর্বিন্যাসের পর এই মুহূর্তে আসনসংখ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে সামান্য ব্যবধান রয়েছে। জম্মুর মোট আসন সংখ্যা ৪৩, কাশ্মীরের ৪৭। তাই লেফটেন্যান্ট গভর্নর পাঁচ সদস্যকে মনোনীত করলে, তাতে বিজেপি-র পাল্লাই ভারী হবে বলে দাবি বিরোধীদের। যদিও উপত্যকায় বিজেপি-র মুখপাত্র সুনীল শেঠির দাবি, ২০১৯ সাল থেকেই এই আইন কার্যকর রয়েছে। যাঁরা এর বিরোধিতা ররছেন, তাঁরা সংবিধানও পড়েননি, জ্ম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনটিও পড়ে দেখেননি। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বাড়তি ক্ষমতা ন্যস্ত থাকা নিয়ে যদি সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে নির্বাচনে নাম লেখানো উচিত নয় বলেও বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তিনি।