দীপক ঘোষ, রঞ্জিৎ সাউ ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা: গতকাল অর্থাৎ রবিবারই কয়লা পাচারকাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মুখোমুখি হতে দিল্লি পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। দিল্লি যাওয়ার আগে কয়লাকাণ্ডে ইডির (ED) সক্রিয়তা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে সরব হন তিনি।
'কেউ বলছে ১০০ কোটি, কেউ বলছে ২০০ কোটি, কেউ বলছে ৫০০ কোটি, কেউ বলছে ১০০০ কোটি, ১০ পয়সার কোনও লেনদেন প্রমাণ করতে পারে বা জনসমক্ষে আনতে পারে, আমার পিছনে ED-CBI লাগাতে হবে না, ফাঁসির মঞ্চ করে বলুন, আমি মৃত্যুবরণ করতে রাজি,' দিল্লি রওনা হওয়ার আগে তোপ দাগেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। কয়লাকাণ্ডে সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। যাবেন দিল্লিতে ইডি দফতরে। এই ঘটনাকে প্রতিহিংসা বলে অভিযোগ করছেন তিনি।
বিজেপির বিরুদ্ধে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, 'যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। ভোটে হেরে গেছে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করতে পেরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এখন প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতিতে নেমেছে, তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে পিছনে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক চরিতার্থ করা ছাড়া এদের আর কোন কাজ নেই।'
যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিহিংসার অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা বিজেপির দাবি, তদন্তের স্বার্থে যা করার তাই করছে ইডি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, 'এটা এজেন্সি বলতে পারবে। আমরা বলতে পারব না। ওরা এক কান্না কাঁদছেন।'
গত ১ সেপ্টেম্বর নারদকাণ্ডে চার্জশিট পেশ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না থাকায়, এই নিয়ে প্রশ্ন তোলে শাসক দল। গতকাল সেই প্রসঙ্গ টেনেই কেন্দ্রের শাসকদলকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, 'যাদেরকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, নির্লজ্জভাবে তখন সিবিআই-এর চোখে ছানি পড়ে যায়। টিভির পর্দায় যাদেরকে কাগজ মুড়িয়ে দেখা গিয়েছে, সুদীপ্ত সেন যাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছে, একজন এখানে বিজেপি বিরোধী দলনেতা আরেকজন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অসমের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির দ্বিচারিতা মানুষ দেখছে।'
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, 'আমরা তো দেখেছি কে কীভাবে টাকা নিয়েছে। তারপরও বলছে ভদ্রলোক, তো ভদ্রলোক প্রমাণ করুন।'
এই ইস্যুতে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষকেই একবন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানিয়েছে বামেরা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, 'এটা সবাই জানেন না যে সিবিআই বা ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখনই কোনও তদন্ত শুরু হয়, তখন এত কথা ওঠে কেন?'
কয়লাকাণ্ডের তদন্তে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে, তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। এরপর কয়লাকাণ্ডে, গত ১ সেপ্টেম্বর রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ৬ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু, ওইদিন দিল্লি যাননি অভিষেক-জায়া। ইডি সূত্রের খবর, অতিমারির ঝুঁকির কারণ উল্লেখ করে তিনি ইডিকে চিঠি দেন। সূত্রের খবর, কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, সেটা তাঁর পক্ষে সুবিধাজনক বলেও চিঠিতে জানান অভিষেক-জায়া।
এদিকে, কয়লাকাণ্ডে ৩ IPS অফিসারকেও তলব করেছে ইডি। ৮ সেপ্টেম্বর শ্যাম সিং, ৯ সেপ্টেম্বর জ্ঞানবন্ত সিং ও ১০ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়েছে সেলভা মুরুগনকে।