দীপক ঘোষ, আশাবুল হোসেন, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : রাজ্য বিজেপিতে কি আরও জোরাল হচ্ছে সংঘাত? দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার পর, এবার শান্তনু ঠাকুর রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও জে পি নাড্ডার (JP Nadda) কাছে নালিশ জানাতে পারেন বলে সূত্রের দাবি। শনিবার ফের বৈঠকে বসতে পারেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। যদিও দলে কোনও অসন্তোষ নেই বলে দাবি রাজ্য নেতৃত্বের।


রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক বলেন, বিজেপি নতুন আনার নামে অভিজ্ঞ নেতাদের ব্রাত্য করে দিয়েছে।


প্রাক্তন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Jay Banerjee) দাবি, বি এল সন্তোষকে সামনে রেখে অমিত মালব্য এবং অমিতাভ চক্রবর্তী এই ছাঁটাইয়ের কাজে নেমেছেন।


রাজ্য বিজেপিতে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তোষ! জোরাল হচ্ছে সংঘাতের সম্ভাবনা। 
কমিটিতে জায়গা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ দলের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে শনিবার ফের বৈঠকে বসতে পারেন রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা। 


যে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের জেরে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বড় সাফল্য পেয়েছে বিজেপি, সেখানে নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জায়গা না দেওয়ায়, ইতিমধ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বহু নেতা। দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বাঁকুড়ার একাধিক বিজেপি বিধায়ক।


কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, মতুয়াদের কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই বেরিয়ে গেছি।


গত ৪ জানুয়ারি শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। এরপর ৯ তারিখ শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন, রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়া কয়েকজন বিজেপি নেতা। 


সূত্রের খবর, শনিবার দক্ষিণ কলকাতায় পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউজে ফের বৈঠকে বসতে পারেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা। ডাকা হয়েছে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বাঁকুড়া, নদিয়ার বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের। থাকতে পারেন শান্তনু ঠাকুর, সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, রিতেশ তিওয়ারিরা।  


বিজেপি সূত্রে আরও খবর, রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভের কথা নরেন্দ্র মোদি ও জে পি নাড্ডার কান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে চান শান্তনু ঠাকুর। সূত্রের খবর, ১৫ জানুয়ারির পর যে কোনও দিন শান্তনু ঠাকুরকে বৈঠকের জন্য সময় দিতে পারেন নাড্ডা। দিন কয়েক আগেই দিল্লিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে মোদি ঘনিষ্ঠ এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে শান্তনু ঠাকুর ও রীতেশ তিওয়ারির কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে ঠিক হয়েছে, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে মোদিকে অবগত করবেন ওই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী।


যদিও এ বিষয় নিয়ে শান্তনু ঠাকুরের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তথাগত রায়। তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান না করলে খারাপ দিন আসছে।


বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রবীণ নেতাদের একাংশের মধ্যে। রাজকমল পাঠক বলেন, দলের প্রবীণ নেতৃত্ব বলছেন, নবীনে তাঁদের কোনও এলার্জি নেই। সিপিএমও নবীন মুখ আনছে। কিন্তু পার্থক্য হল, সিপিএম নতুন এনেছে কিন্তু পুরনোদের বাদ দেয়নি। তারা ফলও পেতে শুরু করেছে।


রাজ্য বিজেপিতে বাড়ছে অসন্তোষ! ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেতৃত্ব। বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ বলেন, যার বয়স হয়েছে, সে সরে যাবে। নবীন নেতা তুলে আনতে হবে, কারণ অনেক দূর হাঁটতে হবে।


রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দলে কোনও অসন্তোষ নেই।


বিজেপির অন্দরের এই অসন্তোষ দেখে, স্বাভাবিকভাবেই খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাপস রায় বলেন, বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে, বিদ্রোহীদের বৈঠক, মুষলপর্ব শুরু হয়ে গেছে।


লোকসভা ভোটে ভাল ফলের পর, বিধানসভা ভোটে ধাক্কা। তারপর থেকেই রাজ্য বিজেপির অন্দরে ঝড়। এই জল কতদূর গড়ায়, সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের।