আশাবুল হোসেন, কলকাতা: শনিবার বক্তৃতা না দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সোমবার প্রকাশ্য সভা থেকে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিলেন। নেতাজির জন্মদিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে, জয় শ্রীরাম স্লোগানের সমালোচনায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিভিন্ন মহল। এবার এনিয়ে সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরশুড়ার সভা থেকে তিনি বলেন, নেতাজিকে অপমান করা হয়েছে। বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই পাল্টা আঙুল তুলেছে।


ভোট মানেই স্লোগানের লড়াই। কিন্তু, এবার তাতে বাদ গেল না কৃষ্ণনামও। হুগলির পুরশুড়ার সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা স্লোগান দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের বাম-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিরোধীরাও। এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল কংগ্রেস-সিপিআইএম-বিজেপির মধ্যে গোপন আঁতাত রয়েছে ৷ জগাই,মাধাই,বিধাই এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল তিন রাজনৈতিক দলকে ৷


সোমবার হুগলির পুরশুড়ার সভা থেকে পাল্টা স্লোগান তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে বিজেপির সঙ্গে বামেদেরও জুড়ে দেন তিনি। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, বিদায় যাও বিজেপি বাম... বামেরাই বিজেপিকে এনেছে ৷’’ ছন্দে আক্রমণ! ছন্দে জবাব! জমজমাট রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ। উল্লেখযোগ্য, শুভেন্দু অধিকারী যিনি একসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন, তিনিও ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ নিয়ে বিজেপির গুণগান গাইছেন ৷ শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘এখন আর কৃষ্ণ নাম করে বাঁচতে পারবেন না। কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, বিজেপি ঘরে ঘরে। তৃণমূল কয়লা চুরি করত এখন স্লোগানও চুরি করছে ৷’’


এই স্লোগানের আদতে জন্মদাতা প্রয়াত অজিত পাঁজা। তৃণমূল গঠনের পর তিনিই প্রথম জনসমক্ষে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘হরেকৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল ঘরে ঘরে।’’ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তৃণমূলের প্রচার কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে অবলুপ্তি ঘটেছিল ওই স্লোগানের। সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের কোনও সভাতেই আর ওই স্লোগান শোনা যায়নি।


সোমবার হুগলির পুরশুড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় সাময়িক ইন্টারনেট বিভ্রাট দেখা দেয়। যা নিয়ে সার্ভিস প্রোভাইডারকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পাশাপাশি এদিনের সভা বুথকর্মীদের উৎসর্গ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘‌বুথকর্মীরাই দলের সম্পদ। তাঁরাই ইলেকশনটা করে। তাঁরাই প্রতিদিন তর্ক করে। ঝড়ে–জলে বক্তৃতা দেয়, ঘুরে বেড়ায়। ভোটার তালিকার কাজ করে। সারা বছর দলের জন্য কাজ করে। তাই আজ এই জনসভা আমি বুথকর্মীদের উৎসর্গ করলাম। তাঁরা ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকব। তাঁরা ভাল না থাকলে আমরা কেউ ভাল থাকব না। পাশাপাশি এদিন তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, নেতা ‌তৈরি হয় তাঁর কাজের মাধ্যমে। গাছ থেকে পড়ে কখনও নেতা তৈরি হয় না। এ কথা স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন। তৃণমূল ঘরে ঘরে মানুষের কাজ করবে। যদি কেউ কোনও ভুলভ্রান্তি করে দল তাঁকে শাসন করবে। এই দল শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। এই দল কাউকে রেয়াত করে না।’‌


ভোটের আশায় এখন সবার মুখে হরে-রাম! শেষ পর্যন্ত ভোটযন্ত্র রাম কিংবা কৃষ্ণ কার ওপর সদয় হয়, সেটাই দেখার।