নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট সংসদে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করবে। তার আগে বুধবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বিশেষ অভিভাষণের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটের যৌথ অধিবেশন সংসদে। এদিন রাইসিনা হিল থেকে সেই মতো সংসদের উদ্দেশে রওনা দেন দ্রৌপদী। ঘোড়ায় টানা জুড়িগাড়িতে চেপে সংসদে পৌঁছন তিনি। সংসদে বিউগল বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাঁকে। (Droupadi Murmu)
বৃহস্পতিবার সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট অধিবেশন। তার আগে সংসদের যৌথ অধিবেশনে বুধবার রাষ্ট্রপতির অভিভাষণ ছিল। সেই মতো সকালে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সংসদভবনের উদ্দেশে রওনা দেন দ্রৌপদী। রাইসিনা হিল থেকে ঘোড়ায় টানা জুড়িগাড়িতে ওঠেন তিনি। আগে-পিছে এবং দুই পাশে, লাল পোশাকে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার ছিলেন তাঁর দেহরক্ষীরাও, যাঁরা ভারতীয় সেনার সবচেয়ে প্রাচীনতম রেজিমেন্টের অংশ। সংসদভবনের বাইরেই তাঁকে অভ্য়র্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। (Interim Budget 2024)
এর পর, 'সেঙ্গল' হাতে নিয়ে প্রথমে সংসদে প্রবেশ করেন এক ব্যক্তি। তাঁর পিছু পিছু সংসদে প্রবেশ করেন দ্রৌপদী, মোদি এবং ধনকড়। বিউগল বাজিয়ে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রবেশ করছেন বলে ঘোষণাও করা হয়। তার পর যৌথ অভিভাষণ শুরু করেন দ্রৌপদী। রাইসিনা হিল থেকে সংসদভবন পর্যন্ত যাত্রাপথে ঘোড়ায় টানা জুড়িগাড়িটি বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে সকলের। ব্রিটেনের রানি, রাজা এবং রাজ পরিবারের সদস্যরা বিশেষ অনুষ্ঠানে এমন জুড়িগাড়িতে চেপে জনসমক্ষে হাজির হন। নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে এদিন একই ভাবে সংসদে পৌঁছন দ্রৌপদী। ছয়টি ঘোড়া তাঁর জুড়িগাড়িটি টানছিল।
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও ঘোড়ায় টানা জুড়িগাড়িতে চেপেই রাজধানীর কর্তব্যপথে পৌঁছন দ্রৌপদী। জুড়িগাড়িতে তাঁর পাশে ছিলেন প্রজাতন্ত্র দিবসের বিশেষ অতিথি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁও। লাল পোশাকে সজ্জিত নিরাপত্তারক্ষীরা, ঘোড়ায় চেপে তাঁদের সঙ্গে এগোন। সেবারও ওই জুড়িগাড়ি এবং ঘোড়ায় সওয়ার নিরাপত্তারক্ষীরা নজর কেড়েছিলেন। তবে এই রীতির নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের থেকেই এই রীতির আমদানি হয় পৃথিবীর অন্যত্র।
ইংরেজ আমলে তদানীন্তন ভাইসরয়রা এমন জুড়িগাড়িতে চেপে, ঘোড়ায় সওয়ার নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে পৌঁছতেন। স্বাধীনতার পরও ভারতের রাষ্ট্রপতিভবনে জুড়িগাড়ি ছিল। ইংরেজ আমলের মতোই, লাল পোশাক, হাঁটু পর্যন্ত বুট পরিহিত দেহরক্ষীরা ঘোড়ায় চেপে রাষ্ট্রপতিকে নিরাপত্তা দিতেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে সেভাবেই অংশ নিতে পৌঁছতেন ভারতের রাষ্ট্রপতিরা। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই রীতি বজায় ছিল। কিন্তু দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী খুন হওয়ার পর নিরাপত্তার খাতিরেই, ওই রীতিতে ইতি টানা হয়।
দীর্ঘ ৪০ বছর পর, এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে সেই প্রথা আবার ফিরিয়ে আনে কেন্দ্রীয় সরকার। জুড়িগাড়িতে চেপেই প্রজাতন্ত্র দিবসে অংশ নেন দ্রৌপদী। এর আগে, ২০১৪ সালে, দেশের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও জুড়িগাড়িতে চেপে বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।