বাঁকুড়া: করোনাকালে মৃত্যুর মিছিল দেখেও একাংশের গা-ছাড়া ভাব কাটেনি। অকারণে ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো থেকে মাস্ক না পরা। অভ্যেস বদলায়নি অনেকেরই। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের এক দরিদ্র রিকশচালক।
বর্তমান সময়ে মারণ ভাইরাসের সঙ্গে সংসার। বেঁচে থাকাটাই যেন পরম প্রাপ্তি। আর এদিকে করোনায় একদিনে দুই ভয়ঙ্কর রেকর্ড। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে প্রথমবার ভারতে একদিনে মৃত্যু হল সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি নাগরিকের। আর একইদিনে প্রথমবার বাংলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হল দেড়শোও বেশি মানুষের।এই নিয়ে টানা ১৬ দিন ধরে রাজ্যে একশো পেরিয়ে গেল মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় ১৫৭ জন করোনা আক্রান্ত প্রাণ হারালেন। এর আগে একদিনে এত পরিমাণ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু দেখেনি এরাজ্য।
কিন্তু এই সঙ্কটের মুহুর্তেও একাংশের মধ্যে বেপোরোয়া ভাব। মাস্ক পরা থেকে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি না করার অভ্যেস এখনও রপ্ত করতে পারছেন না বহু মানুষ। তাঁদেরকে সচেতন করতেই রাস্তায় নেমেছেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের তুঁতবাড়ি এলাকার এক বৃদ্ধ। নাম বিষ্ণু বাউরি। বয়স ষাটের গণ্ডি পেরিয়েছি। নুন আন্তে পান্তা ফুরনো সংসারের চাকা ঘোরাতে এই বয়সেও ঘোরাতে হয় ভাড়া করা রিকশর প্যাডেল। কার্যত লকডাউনে মিলছে না সওয়ারি। কিন্তু বাড়িতে বসে না থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজে লাগিয়েছেন রিকশকে।
বিষ্ণু বাউরি বলেন, নিজের রিকশ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোভিড আবহে মানুষকে সচেতন করতে এই রিকশটি ভাড়া নিয়েছি। শহরের অধিকাংশ মানুষ আমার এই কাজে প্রশংসা করছেন। বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা হেমন্ত বিশ্বাস বলছেন, এভাবেও পাশে থাকা যায়, খুব ভালো উদ্যোগ।
বৃদ্ধের আগ্রহ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরাই সচেতনতার বার্তা দেওয়া পোস্টারে মুড়ে দিয়েছে রিকশা। গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বাঁকুড়ার করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। বুধবারই বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে আইএমএ-র বাঁকুড়া শাখার সম্পাদক তথা চিকিত্সক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের। তা সত্ত্বেও একাংশের মধ্যে ফিরছে না হুঁশ। তাঁদেরকে সচেতন করতেই বার্তা দিয়ে চেলেছেন বৃদ্ধ বিষ্ণু।