পুরী : পুরীর জগন্নাথ ধামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের বিশ্বাস। শ্রীক্ষেত্রের মহাপ্রসাদ পাওয়ার আশায় বহু মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন বছরের পর বছর । নীলাচলে গিয়ে জগন্নাথদেবের প্রসাদপ্রাপ্তিকে পরম সৌভাগ্যের মনে করেন অনেকে। সেই মহাপ্রসাদের নামেই অন্যায় ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুরীর মন্দির সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের বিরুদ্ধে। ওড়িশাটিভি.ইন একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে এমন তথ্যই। ভেজাল এবং কম ওজনের 'খাজা' বিক্রির অভিযোগে বিশাল শোরগোল পুরীতে। সেই সঙ্গে অভিযোগ, কিছু বিক্রেতা 'খাজা'কে মহাপ্রসাদ বলে বিক্রি করছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়, এবং এর জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। ভক্ত ও সেবায়েতদের একাংশের দাবি, মন্দিরে আগত মানুষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কয়েকি দুষ্ট চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরা সাধারণ খজা বা গজাকে মহাপ্রসাদ বলে মিথ্যাভাবে বিক্রি করে থাকে।
ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, এই প্রতারণামূলক ব্যবসা ভক্তদের একাংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি বেরহামপুরের একদল তীর্থযাত্রী জগন্নাথ মন্দিরের কাছে 'খাজা' কেনার সময় প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ। পুরীর একটি দোকান থেকে তাঁরা বিখ্যাত খাজা বা গজা কেনেন। কিন্তু অভিযোগ ২০ কেজির দাম নিলেও, জোকান থেকে ১২ কেজি খাজা দেওয়া হয়। সন্দেহ হওয়ায় কাছের একটি দোকানে মিষ্টি ওজন করার পর তারা বোঝেন, ঠকে গিয়েছেন। তখন দোকানটিকে চ্যালেঞ্জ করলে, তারা স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সাহায্য নিয়ে ভয় দেখান বলে অভিযোগ বাংলার পর্যটকদের । তাঁদের গালিগালাজ করা হয়। ভয় দেখানোর চেষ্টাও হয়।
অভিযোগ, মন্দিরের বাইরে বিক্রেতাদের কেউ কেউ মহাপ্রসাদ বিক্রি করার মিথ্যা দাবি করে তারা প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম আদায় করছে । এই বিক্রেতারা নিম্নমানের এবং সম্ভবত অস্বাস্থ্যকর 'খাজা'কে মহাপ্রসাদ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। অভিযোগ, এতে দর্শনার্থীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগছে। রাস্তার পাশের দোকান থেকে হোক বা ঠেলাগাড়ি থেকে, এই প্রতারণামূলক ব্যবসা অবাধে চলছে বলে অভিযোগ। ভক্তদের একাংশের অভিযোগ, মিষ্টির উপাদান, প্রস্তুতির পদ্ধতি নিয়েও সংশয় আছে।
এই নিয়ে অভিযোগ রয়েছে শ্রীমন্দিরের একদল সেবায়েতেরও। অভিযোগ, কিছু বিক্রেতা 'খাজা'কে মহাপ্রসাদ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত। তাঁদের মতে, পুরীর 'খাজা'কে জিআই ট্যাগ দিয়ে এর মান বজায় রাখা যেতে পারে। সেবায়েত কৃষ্ণ চন্দ্র খুন্তিয়া মনে করেন, প্রশাসনের উচিত ভক্তদের সচেতন করা যে মন্দিরের বাইরে বিক্রি হওয়া 'খাজা' মহাপ্রসাদ নয়। 'খাজা' পুরীর একটি জনপ্রিয় খাবার।
প্রতারিত ভক্তরা সিংহদ্বার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এরপর সন্তোষ পান্ডা নামে একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওড়িশাটিভি.কম সূত্রে খবর, পুরীর সাব-কালেক্টর এই প্রতারক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। Food Safety and Weights & Measures Department কে নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা করেছেন তিনি। এই অভিযোগগুলির ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। সামনেই রথযাত্রা। সারা বিশ্ব থেকে বহু ভক্ত এই সময় আসেন পুরীতে। তাই তাঁরা যেন কোনওভাবে প্রতারিত না বোধ করেন, সেই দিকে নজর রাখা হচ্ছে।