ঢাকা: বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়িতে ভাঙচুর। ঐতিহ্যশালী ওই বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অডিটোরিয়াম থেকে জানলার কাচ, দরজা, আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে ববে খবর। মঙ্গলবার উন্মত্ত ভিড় রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং তাণ্ডব চালায়। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। আপাতত সেখানে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। (Bangladesh News)

Continues below advertisement

কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের ওই বাড়ি বাংলাদেশে হেরিটেজ সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃত। রবীন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে সেখানে। ছুটির দিনে বহু মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে সেখানে। জানা গিয়েছে, গত রবিবারও টিকিট কেটে রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়িতে ঢুকতে যান এক ব্যক্তি। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় সেখানে। পাশাপাশি, মোটর সাইকেল রাখার জন্যও আলাদা করে টাকা নেওয়া হয়। (Rabindranath Tagore's Home Vandalised)

কিন্তু অভিযোগ, প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে টোকেন দেওয়া হলেও, মোটরসাইকেল রাখার জন্য যে টাকা নেওয়া হয়, তার বিনিময়ে কোনও টোকেন দেওয়া হয়নি। সেই নিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রথমে বচসা শুরু হয় নিরাপত্তা রক্ষীদের। এর পর ক্রমেই তা বিরাট আকার ধারণ করে। বচসা-কথা কাটাকাটি হাতাহাতি-মারামারির রূপ নেয়। কাছারিবাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ব্যক্তিকে আটকে রাখেন, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

Continues below advertisement

বিষয়টি সামনে আসতেই আছড়ে পড়ে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার সেই নিয়ে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের বাইরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মানববন্ধন করে প্রতিবাদ দেখানো হয়। মানববন্ধন করে শহর প্রদক্ষিণের পর কাছারিবাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েন অনেকে। আর তার পরই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। নিরাপত্তারক্ষীদের দফতর, লাইব্রেরি, অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিচারক সিরাজুল ইসলামকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে। 

দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নিলে ওই বাড়িটি ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও প্রায়শই সেখানে গিয়ে উঠতেন। সেই বাড়িতে হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠছে। এই ঘটনার আঁচ এসে পড়েছে সীমান্তের এপারেও। তৃণমূলের তরফে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা লেখে, 'বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের ভিটেয় ভাঙচুর চালানোর তীব্র নিন্দা করছি আমরা। বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য, মানবতার প্রতীক গুরুদেব। এই ধরনের আচরণ প্রত্যেক বাঙালির পরিচয়, তাঁদের গর্বের প্রতি অবমাননাকর। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুন এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলুন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলুন। আমাদের নায়কদের উপর উন্মত্ত ভিড়ের রোষ আছড়ে পড়া কাম্য নয়'।

রাজ্য বিজেপি-র সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লেখা হয়, 'কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বঙ্গমাতা' কবিতাটি শেষ করেছিলেন এই মর্মে:  'সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি'। আজ বাংলাদেশের যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি, ওই পঙক্তি অমার্জনীয় যন্ত্রমার উদ্রেক ঘটায়। যে দেশ তার ইতিহাস ভুলে যায়, শিকড় ভুলে যায়, আত্মা বিক্রি করে দেয়, তারা অতল অন্ধকারের ডুবে যাবে। বাংলাদেশের ইসলামি শক্তি রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের ভিটে ধ্বংস করেছে, যিনি কি না ওদের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মহান কবির বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শূন্যতার ঊর্ধ্বে। তিনি ঐক্য, সংস্কৃতি, মানবতার প্রতীক, যতদিন মানবতা থাকবে, তাঁর উত্তরাধিকার থাকবে। সাম্প্রদায়িক দাসত্বের এই বর্বর দৃশ্যপটে একটি জাতির বিবেক যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, তা সভ্যতার রক্তক্ষরণের লক্ষণ, যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব'।