নয়াদিল্লি: সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। জানালেন, সংসদে বিরোধীদের, বিশেষ করে তাঁকে কথা বলার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। তিনি কথা বলতে চান। মুখোমুখি দেখা করে সে কথা জানিয়েওছেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে (Om Birla)। কিন্তু তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হবে না বলে একরকম নিশ্চিত বলে দাবি রাহুলের। 


সাংবাদিক বৈঠক করে সংসদের ভিতরের কর্মকাণ্ড নিয়ে সরব হন রাহুল


বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে সংসদের ভিতরের কর্মকাণ্ড নিয়ে সরব হন রাহুল। রাহুল বলেন, "সকালে সংসদে গিয়েছিলাম। স্পিকারের সঙ্গে দেখা করি। জানাই, আমি সংসদে কথা বলতে চাই। সরকারের চার মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তার কৈফেয়ত দেওয়ার অধিকার রয়েছে আমার। কিছুই পরিষ্কার নয়। তবে আমার মনে হয়, আমাকে বলতে দেওয়া হবে না। আজ সংসদে আমি ঢোকার এক মিনিটের মধ্যেই অধিবেশন মুলতবি করে দেওয়া হয়। কাল কথা বলতে পারব বলে আশা। তবে মনে হয় না সেই সুযোগ দেওয়া হবে।"


গৌতম আদানি এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং কারচুপির ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়ে সংসদে সরব হয়েছিলেন রাহুল। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আদানির মধ্যেকার সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাহুল জানিয়েছেন, তাঁর সেই ভাষণ সংসদের রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ দিন রাহুল বলেন, "ওই ভাষণে এমন কোনও কথা ছিল না, যা পাবলিক রেকর্ড থেকে বার করি আমি। সংবাদপত্র, বিবৃতিতে সব তথ্য ছিল। আসলে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী আদানি ইস্যু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। নজর ঘোরাতে চাইছেন। তামাশা করছেন। সেই জন্যই আমাকে সংসদে বলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে হয় আমার।"


 কেমব্রিজেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল।  জানিয়েছিলেন, সংসদে প্রায়শই বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে তাঁদের কথা, তাঁদের প্রশ্ন শুনতে না পান দেশের মানুষ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ এবং বিজেপি-কে ফ্যাসিবাদী বলেও উল্লেখ করেন। বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাততে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ব্যবহার করেছে সরকার, এই অভিযোগও তোলেন। রাহুলের এই মন্তব্যে  কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের দাবি ছিল, বিদেশে গিয়ে দেশকে বদনাম করছেন রাহুল। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে উত্তাল হয় সংসদ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অভিযোগ ছিল, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন রাহুল, তাঁর এই আচরণ দেশদ্রোহিতারই সমান। কিন্তু এ দিনও নিজের মন্তব্যে অনড় ছিলেন রাহুল। তাঁর বক্তব্য ছিল, "ভারতে যদি গণতন্ত্রই থাকত, তাহলে সংসদে কথা বলার অধিকার থাকত আমার। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে বলা যায়, ভারতে গণতন্ত্র এখন পরীক্ষার মুখে। সরকারের মন্ত্রীদের যেমন কথা বলার অধিকার রয়েছে, কথা বলার অধিকার রয়েছে বিরোধীদেরও।"


ঘুরপথে আদানি গোষ্ঠীর হাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির বরাতও তুলে দেওয়া হয়েছে বলে একদিন আগেও দাবি করেছেন রাহুল। এ দিনও ফের সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। রাহুল বলেন, "আসল প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। আদানি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কী সম্পর্ক? আদানিজিকে কেন প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বরাত দেওয়া হচ্ছে এখনও? শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশে আদানির হয়ে কে তদ্বির করল? অস্ট্রেলিয়ায় স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী এবং আদানিজির মধ্যে বৈঠকে কী কথা হয়? আমি একজন সাংসদ। আমার কর্তব্য সংসদে জবাবদিহি করা, প্রশ্ন তোলা। আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে, যা সংসদে আলোচনা হওয়া কাম্য।"



সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি


তবে সংসদে বিরোধীদের কথা বলতে না দেওয়ার এই অভিযোগ একা রাহুলই করেননি। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। বুধবার রাতে বিষয়টি নিয়ে সরব হন মহুয়া। ট্যুইটারে লেখেন, 'গত তিন দিন ধরে স্পিকার ওম বিড়লা শুধুমাত্র বিজেপি-র মন্ত্রীদের মাইকে কথা বলতে দিচ্ছেন। তাঁদের কথা শেষ হলেই অধিবেশন স্থগিত মুলতবি করে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের তরফে একজন সাংসদকেও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্রকে আক্রমণ করা হচ্ছে। আর তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্পিকার। এই ট্যুইটের জন্য জেলে জেতেও আপত্তি নেই আমার'। মহুয়ার এই অভিযোগের পরই সরাসরি সাংবাদিক বৈঠক করে একই অভিযোগ তুললেন রাহুল। সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত।