নয়াদিল্লি: অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় মনমোহন সিংহের দেহ কাঁধে নিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী। শনিবার দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন গাঁধী পরিবারের সদস্যরা। পুষ্পার্ঘ নিবেদন এবং গান স্যালুটের পর মনমোহনের দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য। সেখানে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে মনমোহনের দেহ কাঁধে নেন রাহুল। মাথায় রুমাল বেঁধে মনমোহনের দেহ কাঁধে নিয়ে এগিয় যান তিনি। (Rahul Carries Manmohan)
বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির AIIMS-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। সেই সময় বেলগাভিতে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন রাহুল। খবর পাওয়া মাত্র দিল্লি ছুটে আসেন তিনি। সেই থেকে মনমোহনের পরিবারের পাশে আগাগোড়া দেখা গিয়েছে রাহুল, তাঁর বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে। সনিয়া গাঁধীকেও দেখা গিয়েছে সর্বত্র। আজ নিগমবোধ ঘাটে মনমোহনের শেষকৃত্যেও তার অন্যথা হল না। (Manmohan Singh Funeral)
এদিন কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে যখন মনমোহনের মরদেহ বের করা হয়, সেনার ট্রাকে মনমোহনের পরিবারের সঙ্গে শামিল ছিলেন রাহুলও। নিগমঘাটে পৌঁছে মনমোহনের মরদেহে পুষ্প নিবেদনও করেন তিনি। সকলের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন হয়ে গেলে, অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্য যখন তোলা হয় মরদেহ, সেই সময় মাথায় রুমাল বেঁধে এগিয়ে আসেন রাহুল। আচারানুষ্ঠান চলাকালীনও ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা এড়াতেই দেখা যায় রাহুলকে। সকলের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
মনমোহনের সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক একসময় টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়েও যায়। ২০১৩ সালে ইউপিএ আমলে মনমোহনের তদানীন্তন সরকার একটি অর্ডিন্যান্স আনে। ওই অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছিল, কোনও মামলায় জনপ্রতিবিধিরা যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাতেও অন্তত তিন মাস সংসদে তাঁর সদস্যতা বাতিল হবে না। কিন্তু নিজেদের সরকারের ওই অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলেন রাহুল। সেই নিয়ে মনমোহনের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য দেখা দেয়।
সে নিয়ে রাহুলের যুক্তি ছিল, "সরকার এই অর্ডিন্যান্স নিয়ে যা করছে, আমার মতে তা ভুল। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, প্রত্যেক দলই করে। কিন্তু এটা বন্ধ হওয়া দরকার। দুর্নীতি রুখতে চাইলে কোনও রকম আপস করা উচিত নয়।" এমনটা বলার পরই সাংবাদিক বৈঠকে অর্ডিন্যান্সের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। সেই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। দলের অন্দরেও রাহুলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়। এমনকি মনমোহনও রাহুলের আচরণে আহত হন বলে জানা যায়। গতবছর মানহানি মামলায় রাহুলের সাংসদ পদ যখন খারিজ করা হয়, সেই সময়ও ওই অর্ডিন্যান্সের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেই আইন পাস হলে, রাহুলকে নরেন্দ্র মোদি সরকার সহজে লোকসভা থেকে বের করে দিতে পারত না বলে দাবি করেন অনেকেই।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে ক্ষতে প্রলেপ পড়ে যেমন, মনমোহনের সঙ্গে রাহুলের সম্পর্কের উপর থেকেও মেঘ কেটে যায়। বরং গত কয়েক বছরে রাহুল নিয়মিত মনমোহনের খোঁজ রাখতেন, দেখা করতেন এমনকি বিভিন্ন বিষয়ে মনমোহনের সঙ্গে পরামর্শও করতেন বলে জানা যায়। মনমোহনের প্রয়াণে রাহুল জানান, তিনি নিজের প্রদর্শককে হারিয়েছেন। মনমোহনের পরিবারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে রাহুলের।