রাজকোট: ছেলে-বুড়ো সকলের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা। ইনডোর গেমস থেকে রেসিং ট্র্যাক, কমতি ছিল না কোনও কিছুর। পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে টেক্কা দিতে খামতি ছিল না দেখনদারিতে। কিন্তু গলদ ছিল ব্যবস্থাপনাতেই। যে কারণে গুজরাতের রাজকোটের গেমিং জোন কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় ২৮ জনের, যার মধ্যে ছিল ৯ শিশুও। এই ঘটনাকে মনুষ্যঘটিত বিপর্যয় বলেই উল্লেখ করেছে গুজরাত হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে তারা। (Rajkot Gaming Zone Fire)


এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী রাজকোটের মনোরঞ্জন কেন্দ্র, ওই গেমিং জোনের কাছে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কোনও ছাড়পত্র ছিল না। অর্থাৎ নো অবজেকশন সার্টিফিকেট হাতেই পায়নি তারা। ওই মনোরঞ্জন কেন্দ্র থেকে ঢোকা এবং বেরনোর জন্য একটিমাত্রই রাস্তাই ছিল। ফলে, রবিবার যখন আগুন লাগে, সেখান থেকে বেরোতে না পেরেই অনেকে ঝলসে যান বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। এমনকি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছিল ওই গেমিং জোন, তার অনুমোদনও ছিল না বলেও অভিযোগ। প্রশাসনিক ছাড়পত্র নিয়ে যাতে ঝামেলা না পোহাতে হয়, তার জন্য অস্থায়ী কাঠামোরও নির্মাণ হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে, যেটি হুড়োহুড়ির সময় ভেঙে পড়ে। এর ফলেও অনেকে বেরোতে পারেননি। (Rajkot Gaming Zone)


শনিবার রাজকোটের TRP মলের অন্তর্ভুক্ত ওই গেমিং জোনটিতে আগুন লাগে। সপ্তাহান্তে সেখানে ডিসকাউন্ট চলছিল। মাত্র ৯৯ টাকার টিকিটেই সমস্ত খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বহু মানুষই সেখানে পৌঁছেছিলেন।  সেই সময় শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায় বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। নিশ্চিত কারণ হিসেবে এখনও যদিও এই তত্ত্বে সিলমোহর পড়েনি, তবে অগ্নিকাণ্ডের সময় ওোই গেমিং জোনে প্রায় ২০০০ লিটার ডিজেল, ১০০০-১৫০০ লিটার পেট্রোল, ফাইবার, ফাইবার গ্লাস শিটের মতো দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল বলে জানা গিয়েছে। ফলে আগুন ছড়াতে সময় লাগেনি, তা নিয়ন্ত্রণে আনতেও বেগ পেতে হয় দমকল বাহিনীকে। 


আরও পড়ুন: Delhi Fire: দিল্লির হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ৬ নবজাতকের মৃত্যু; চিকিৎসাধীন আরও ৬


আগুন এতই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও ধোঁয়ার কুণ্ডলী চোখে পড়ে। এক একটি পুড়ে কার্যতই ছাই হয়ে গিয়েছে। ফলে শনাক্ত করার উপায় ছিল না। পোড়া দেহাংশের সঙ্গে পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের DNA-র নমুনা মিলিয়ে শনাক্তকরণের কাজ এগোয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে ৯ শিশু মারা গিয়েছে, তাদের মধ্যে চার জনের বয়স ১২ বছরও পেরোয়নি। স্বভাবতই এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। 


রাজকোট পৌরসভা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেয়নি ওই গেমিং জোনটিকে। শনিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেকথা জানান রাজকোটের মেয়র তথা বিজেপি নেত্রী নয়না পাহাড়িয়া। তার পরও রমরমিয়ে এতদিন ওই গেমিং জোন চলছিল কী করে, প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। পাহাড়িয়া যদিও এই ঘটনায় রাজনীতি হওয়া কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন, কিন্তু পৌরসভার চোখের সামনে দিনের পর দিন কী করে ওই ব্যবসা চলছিল, প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে পৌরসভার ভূমিকা নিয়ে। ওই গেমিং জোনের মালিক নিতিন জৈন এবং ম্যানেজার যুবরাজ সিংহ সোলাঙ্কিকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তও শুরু হয়েছে। মৃতদের পরিবারের জন্য ইতিমধ্যেই মাথাপিছু ৪ লক্ষ এবং আহতদের জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে গুজরাত সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ এবং আহতদের ৫০ লক্ষ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।  কিন্তু সরকারি গাফিলতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।