অর্ণব মুখোপাধ্যায়, অযোধ্যা: আবেগের সঙ্গে আধুনিকতম প্রযুক্তির ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে রামমন্দির (Ram Mandir)। উদ্যোক্তাদের দাবি, ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে ভূমিকম্প (Earthquake) - কোনও কিছুই টলাতে পারবে না এই মন্দিরের ভিত। মন্দিরকে কেন্দ্র করে সেজে উঠছে অযোধ্যা (Ayodhya) নগরী।
আগামী ২২ জানুয়ারি, সিংহাসনেই ফেরানো হবে রামলালাকে। ফৈজাবাদ, যা এখন অযোধ্যা অত্যন্ত পুরনো শহর। এখানকার প্রতিটি রাস্তা, গলিঘুঁজি, বাড়িঘর থেকে সরযূর ঘাট - প্রাচীন এই সবকিছুর মধ্যেই অন্তর্নিহিত ইতিহাস আর আবেগের বারুদ। অযোধ্যায় নতুন ঘাট থেকে লতা মঙ্গেশকর চক হয়ে নবনির্মিত রামমন্দির পর্যন্ত রাস্তার দুধারে, সমস্ত কিছুর ওপরেই পড়ছে আধুনিকতার প্রলেপ।
অনেকেই বলছেন, রামমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের সঙ্গে সঙ্গে একটি অধ্যায়ের বৃত্তপূরণ হতে চলেছে। যার আগাগোড়া বিতর্ক আর রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ভরা। প্রায় ৫০০ বছর আগে, ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজপুতদের যুদ্ধে হারানোর পরে, মুঘল সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার মীর বারকির উদ্যোগে নির্মিত হয় বাবরি মসজিদ।
আর ৫ শতাব্দী পরে, সেই জায়গাতেই মাথা তুলেছে সুদৃশ্য রামমন্দির। সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার পর ৪ বছর পার হয়েছে। আর কয়েক দিন বাদেই সুবিশাল মন্দিরের। ওই দিন অযোধ্যায় লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হতে পারে। শহরের কোনও হোটেল আর খালি নেই। বুক করা হয়েছে প্রায় দু’মাস আগে থেকে।
শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট দাবি করেছ, এই মন্দিরটি এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে যে, আগামী হাজার বছরেও সেটি মেরামতের প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি, ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও নড়বে না মন্দিরের ভিত।
রাইসিনা হিল রাষ্ট্রপতি ভবন, তার কাছে নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকের মতো অযোধ্যার করসেবকপুরমে রামমন্দিরও তৈরি হয়েছে পিঙ্ক স্টোন দিয়েই। গোলাপী বেলেপাথর ব্যবহার, মার্বেল, কর্ণাটক-তেলঙ্গানার গ্রানাইট দিয়ে তৈরি হয়েছে মন্দির।
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের ওয়েবসাইট বলছে, মূল মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৭ একর জমির ওপরে। মোট বিল্ট আপ এরিয়া ৫৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট। মন্দিরের মোট দৈর্ঘ ৩৬০ ফুট। প্রস্থে ২৩৫ ফুট। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মন্দিরের চূড়া পর্যন্ত মোট উচ্চতা ১৬১ ফুট। রামমন্দিরের ৩টি তলের প্রতিটির উচ্চতা ২০ ফুট করে। মন্দিরের প্রথম তলে মোট স্তম্ভ রয়েছে ১৬০টি। দ্বিতীয় তলে স্তম্ভের সংখ্যা ১৩২ আর তৃতীয় তলে ৭৪টি স্তম্ভ রয়েছে। রাম মন্দিরের মোট ফটকের সংখ্যা ১২। একেবারে ধ্বজার নীচে থাকবে গর্ভগৃহ। সেখানেই অধিষ্ঠিত হবেন রামলালা।
মন্দিরে প্রবেশের পথ বা সিঁড়ির নাম দেওয়া হয়েছে সিংহদ্বার। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেই সোজা দেখা যাবে গর্ভগৃহ। দেখা মিলবে রামলালার। মন্দিরের নকশা তৈরির জন্য গুজরাতের স্থপতি চন্দ্রকান্ত সোমপুরের সাহায্য নেওয়া হয়। চন্দ্রকান্তর দাদু গুজরাতের সোমনাথ মন্দির তৈরি করেছিলেন।
নগর স্থাপত্যশৈলী মেনে নির্মিত অযোধ্যার রাম মন্দির। তার প্রতিটি পরতে অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ছাপ। সেই শিল্পকর্ম দেখতেই সকলেই এখন ২২ জানুয়ারির অপেক্ষায়।