মুম্বই: নতুন নয়, এমনটা তিনি আগেও করেছেন। রতন টাটার মানবদরদী চেহারার পরিচয় আরও একবার পাওয়া গেল। এককালের ডাকসাইটে, দেশের প্রথম সারির একজন শিল্পপতির সংস্থার অসুস্থ কর্মচারীকে, তাও বর্তমান নয়, প্রাক্তন, দেখতে ছুটে যাওয়ার ঘটনা ফের দেখিয়ে দিল, তিনি মানুষটা কেমন। বরাবরই মিতভাষী, স্মিতহাস্যময়, বিনম্র মানুষ বলে পরিচিত তিনি। পাশাপাশি তিনি যে সমব্যাথী মনের মানুষ, সেটাও দেখা গেল। সত্তর পেরনো রতন টাটা মুম্বই থেকে পুণে গিয়ে টাটা সন্স গোষ্ঠীর দু বছর ধরে অসুস্থ এক কর্মচারীর বাড়ি গেলেন, তিনি কেমন আছে দেখতে! মুম্বই থেকে গাড়িতে তিনি যান পুণের ফ্রেন্ডস সোসাইটিতে ওই প্রাক্তন কর্মচারীর বাড়়িতে।
সাধারণতঃ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনও কর্মীর কর্মজীবন ফুরলে অবসর জীবনে মালিকরা তো দূরের কথা, সহকর্মীদের সকলেই হয়তো যোগাযাগ রাখেন না, ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের দুএকজন ছাড়া। এটাই সাধারণতঃ দেখা যায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নজির গড়লেন টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ঘটনাটি তিনি নিজে জানাননি, লিঙ্কডইন পোস্টে জানিয়েছেন পুণের জনৈক এক্সিকিউটিভ যোগেশ দেশাই। তিনি রতন টাটার ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করার ছবি পোস্ট করে দেশাই জানিয়েছেন, রতন টাটা যখন পুণের ওই হাউসিং সোসাইটিতে যান, সেসময় মিডিয়ার কোনও লোক ছিলেন না, ছিলেন না কোনও দেহরক্ষী, বাউন্সারও।
রতন টাটা ওই কর্মচারীর গোটা সংসারের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন দেশাই। তাঁর সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিত্সার আর্থিক সংস্থান করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
২০০৮ সালে ২৬/১১র সন্ত্রাসবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত টাটা শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ কর্মীর পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন, তাঁদেরও যাবতীয় জীবনযাপনের খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে অতিমারীর সময়ও রতন টাটা সংবেদনশীল মানসিকতা থেকেই লে অফ, ছাঁটাইয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলি যেভাবে লেঅফের পদক্ষেপ করেছে, সেটা একেবারেই চটজলদি, তড়িঘড়ি নেওয়া সিদ্ধান্ত। তাদের শীর্ষ পরিচালকদের সহানুভূতি, সমবেদনার অভাব এতে প্রকট হয়ে উঠেছে। তাঁর কথায়, এই লোকগুলো আপনাদের জন্য কাজ করেছেন। পুরো জীবনটা আপনাদের সেবা করেছেন। আর এখন আপনারা ওঁদের বর্ষায় বাইরে বের করে দিচ্ছেন! শ্রমিক বাহিনীর প্রতি এই আপনাদের মূল্যবোধ ?