নয়াদিল্লি: ক্ষমতা ধরে রাখতে সংবিধানে পরিবর্তন ঘটানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। নিজে এককালে প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট  নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদটিই তুলে দেন। তুরস্কে রিচেপ তইপ আর্দোয়ানের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল আমেরিকা-সহ অন্য দেশগুলিও। সেই আবহেই তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেলেন তিনি। দেশের প্রধান বিরোধী দল, Republican People's Party আর্দোয়ানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করতে সফল হল। (Recep Tayyip Erdogan)


২০০৩ থেকে ২০০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আর্দোয়ান। ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তুরস্কের প্রেসিডেন্টও তিনি। বিগত দু'দশক  ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকার পর এই প্রথম এত বড় ধাক্কা খেলেন আর্দোয়ান এবং তাঁর দল Justice and Development Party. দেশের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তানবুল-সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির দখলই বিরোধীদের হাতে উঠেছে। দ্বিতীয় বার ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আক্রম  ইমামোগলু। (Turkey Local Elections)


নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে আক্রম বলেন, "আমার প্রিয় ইস্তানবুলবাসী, আজ নতুন ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিলেন আপনারা। আজ থেকে তুরস্ক অন্য তুরস্ক হয়ে উঠবে। গণতন্ত্র, সাম্য এবং স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছেন আপনারা। ব্যালট বাক্সে আশা জাগিয়েছেন আপনারা।"



আরও পড়ুন: Sheikh Hasina: "আগে ভারতীয় শাড়ি পোড়ান", 'বয়কট ইন্ডিয়া' আন্দোলনকারীদের কড়া বার্তা শেখ হাসিনার


বিরোধীদলের এই জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ দেশের রক্ষণশীল পশ্চিমাঞ্চলেও তারা জয়ী হয়েছে। কৃষ্ণসাগর সংলগ্ন রক্ষণশীল আনাটোলিয়াতেও জয়ী হয়েছে তারা। দলের হয়ে দফায় দফায় সেখানে প্রচারে গিয়েছিলেন আর্দোয়ান।  হাজিয়া সোফিয়া মসজিদে প্রার্থনাও করতে দেখা যায় তাঁকে। তার পরও বিরোধী দলের জয়ে তুরস্কে নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।


নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর আঙ্কারায় দলের সদর দফতরে বক্তৃতা করেন আর্দোয়ান। তিনি বলেন, "ফলাফল যাই হোক না কেন, এই নির্বাচনে গণতন্ত্রই জয়ী হয়েছে। আমরা যে আশা করেছিলাম, তা পূরণ হয়নি। তবে যা ঘটে, তার নেপথ্যে কোনও না কোনও কারণ থাকে। মানুষের আস্থা আর্জনে আরও উদ্যোগী হতে হবে আমাদের।" সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমি আপনাদের পাগলের মতো ভালবাসী।"


কিন্তু আর্দোয়ানের এই বার্তার পরও কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস দেখান। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, পতাকা উড়িয়ে, টর্চ জ্বালিয়ে জয় উদযাপনে শামিল হন তাঁরা। একযোগে রব তোলেন, "তুরস্ক ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্ম নিরপেক্ষই থাকবে। আর্দোয়ান পদত্যাগ করুন আপনি।" তাই দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের প্রতি সমর্থনে ভাঁটা পড়েছে। 


যদিও স্থানীয় নির্বাচনে ভর করে আর্দোয়ানের শাসনকালের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদে একাংশের। তাঁদের মতে, স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে গোটা দেশের মন বোঝা সম্ভব নয়। ২০২৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় স্তরের কোনও নির্বাচন আপাতত নেই। ফলে ভুল-ভ্রান্তি শুধরে নেওয়ার যথেষ্ট সময় রয়েছে আর্দোয়ানের হাতে।