কাঠমান্ডু: নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির অযোধ্যা ও রামকে নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের আগুনে জল ঢালতে শেষ পর্যন্ত আসরে নেমে সেদেশের বিদেশমন্ত্রক সাফাই দিল, উনি কারও আবেগ, অনুভূতিতে আঘাত করতে চাননি। অযোধ্যার গুরুত্ব, তাত্পর্য্য, সাংস্কৃতিক মূল্যকে ছোট করার উদ্দেশ্যও তাঁর ছিল না। ওলির গতকালের সত্যিকারের অযোধ্যা নেপালে, ভগবান রাম নেপালি, এহেন মন্তব্যে ব্যাপক জলঘোলা হচ্ছে। সোমবার তিনি সাংবাদিকদের সামনে রামের জন্মস্থান অযোধ্যা নেপালের অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করেন, আরও বলেন, রাম নেপালি, ভারত ‘নকল অযোধ্যা’ বানিয়ে নেপালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে হস্তক্ষেপ করেছে।
নেপালি ভাষায় রামায়ণ রচয়িতা আদিকবি ভানুভক্ত আচার্য্য়ের ২০৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, আসল অযোধ্যা নেপালের বীরগঞ্জের পশ্চিমে। এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি নাকি এমন প্রশ্নও করেন, অযোধ্যা যদি ভারতেই হবে, তবে কেন রাম সীতাকে বিয়ে করতে জনকপুর পর্যন্ত যাবেন! নেপালি মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুসারে ওলি বলেছেন, ভারত যে জায়গাটাকে অযোধ্যা বলছে, সেটাই আসল অযোধ্যা হলে ভগবান রাম ও সীতা তো তার কাছাকাছি কোথাও বিয়ে করতেন।
নেপালের ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজের বলে দেখিয়ে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চিনের প্রভাব বাড়তে দেওয়া- নানা ইস্যুতে যখন নয়াদিল্লি-কাঠমান্ডু সম্পর্কে জটিলতা মাথাচাড়া দিয়েছে, তখনই তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ওলির বিতর্কিত মন্তব্য। হিন্দু সংগঠনগুলি তাঁর মন্তব্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। চিনের পরোক্ষ মদতেই নেপালি প্রধানমন্ত্রী এমন কথাবার্তা বলছেন বলে ভারতে নানা মহলের আশঙ্কা। তবে নেপালের তরফে বিবৃতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, ওলির বক্তব্যের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীরাম ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত জায়গাগুলিকে ঘিরে নানা মিথ, রেফারেন্স আছে। শ্রীরাম, রামায়ণ ও এই সমৃদ্ধিশালী সভ্যতার সঙ্গে যুক্ত জায়গাগুলির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য রামায়ণের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা বিস্তারিত সাংস্কৃতিক ভূগোল নিয়ে আরও গবেষণা, পড়াশোনার প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র এটাই বলতে চেয়েছেন।
ভারতে উত্তেজনা যাতে থিতিয়ে আসে, সেজন্য বিবৃতিতে দুদেশের নেতাদের হাতে ২০১৮-র মে মাসে সূচনা হওয়া রামায়ণ সার্কিটের প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে। ওই সার্কিটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জনকপুর-অযোধ্যা যাত্রী বাস সার্ভিস। বলা হয়েছে, এসব দেখিয়ে দিচ্ছে, আমাদের দুটি দেশ ও জনগণের মধ্যে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাংস্কৃতিক বন্ধন কতটা সুদৃঢ়।