নয়াদিল্লি: আর জি কর কাণ্ডে তদন্তের গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। সেই আবহেই সুপ্রিম কোর্টে মারাত্মক অভিযোগ তুলল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. তাদের দাবি, অপরাধের জায়গা আগের মতো নেই। তাই তদন্ত করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদিও CBI-এর এই অভিযোগ খারিজ করে দেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবল। তাঁর দাবি, আগাগোড়া ভিডিওগ্রাফি হয়েছে। কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। (RG Kar Supreme Court Hearing)


বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন, ঘটনার টাইমলাইন নিয়েও প্রশ্ন তোলে সর্বোচ্চ আদালত। অপরাধের অভিযোগ প্রথমে সকাল ১০টা বেজে ১০ মিবিটে নথিবদ্ধ হয়। সেক্ষেত্রে আপরাধের জায়গা  রাত ১১টা বেজে ৩০ মিনিটে সুরক্ষিত করা হল কেন, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। এত ক্ষণ ধরে কী হচ্ছিল জানতে চান তাঁরা। জবাবে কপিল জানান, প্রতি মিনিটের টাইমলাইন তুলে ধরতে পারেন তিনি। (RG Kar Case)


৯ অগাস্ট সন্ধেয় ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়ার পর, রাত ১১টা ৩০ মিনিটে কেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হল, জানতে চান বিচারপতি জে মিশ্র। কপিল জানান, সন্ধে ৬টা বেজে ১০ থেকে ৭টা বেজে ১০ মিনিটের মধ্যে ময়নাতদন্ত হয়।


এতে বিচারপতি জে পর্দিওয়ালা বলেন, "ময়নাতদন্ত শুরু হওয়ার অর্থই অস্বাভাবিক মৃত্যু। অথচ ৯ অগাস্ট রাত ১১টা বেজে ২০ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ৮৬১/২৪ অভিযোগ দায়ের হয়। ১১টা বেজে ৪৫ মিনিটে এফআইআর দায়ের, হ্যাঁ কি না? অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগেই ময়নাতদন্ত শুরু হয়, এখানেই খটকা লাগছে।" তাড়াহুড়ো না করে, দায়িত্বশীল হয়ে, জবাব দিতে সিবলকে অনুরোধ জানান বিচারপতি।


অস্বাভাবিক মৃত্যুর ৮৬১/২৪ অভিযোগ ঠিক কখন দায়ের হয়, জানতে চান বিচারপতি। জবাবে সিবল জানান, দুপুর ১টা বেজে ৪৬ মিনিটে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর সময় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিচারপতি। যিনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, পরের শুনানিতে কলকাতা পুলিশের সেই আধিকারিককে হাজির হতে বলা হয়, যাতে সঠিক টাইমলাইন নিয়ে তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেন।


CBI এবং রাজ্যের টাইমলাইন নিয়ে ধন্দ দেখা দিলে বিচারপতি পর্দিওয়ালা বলেন, "আপনাদের রাজ্য যা করেছে, তা আমি ৩০ বছরে দেখিনি। প্রথম প্রশ্ন হল, সত্যিই কি রাত ১০টা বেজে ৩০ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়? দ্বিতীয় প্রশ্ন, অ্যাস্টিস্ট্যান্ট সুপার নন-মেডিক্য়ালের ভূমিকা সন্দেহজনক। কেন এমন আচরণ ওঁর?"


সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, সকাল ১০টা বেজে ১০ মিনিটে জেনারেল ডায়েরি হয়। ফোনে জানা যায়, হাসপাতালের থার্ড ফ্লোরে স্নাতকোত্তর স্তরের এক তরুণী অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মৌখিক ভাবে বোর্ড যে মতামত জানায়, সেই অনুযায়ী, শ্বাসরোধের ফলে মৃত্যু হয়েছে এবং সম্ভবত যৌন নির্যাতনও চলেছে। সন্ধে ৬-৭টার মধ্যে ময়নাতদন্ত হয়, তার পর শুরু হয় তদন্ত। ডায়াসে নীল রংয়ের জিন্স পাওয়া যায়। পরীক্ষা করে দেখা হয় নির্যাতিতাকে। ডায়াসে ম্যাট্রেসের উপর তরুণীর দেব অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল। এর পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়। 


রেকর্ডে রাত ১১টা বেজে ৩০ মিনিট অংশটি কেন কালি দিয়ে গোল করা রয়েছে, জানতে জান বিচারপতি পর্দিওয়ালা। সিবল জানান, ওই সময় পুলিশ আধিকারিক থানায় পৌঁছন। এর পর আদালতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সই করা রিপোর্ট জমা দেন সিবল। তিনি জানান, কেস ডায়েরিতেও এই রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু CBI ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালতে তা পেশ করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার একটি ধারণা তৈরি করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেন সিবল।


আদালতে সিবল জানান, বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্রের তালিকাতেও অস্বাভাবিক মৃত্যুর উল্লেখ রয়েছে, অনুসন্ধানেও রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও এই তথ্য রয়েছে, সব রাত ১১টার আগেই হয়েছে। অনুসন্ধান শুরু হয় ৪টে বেজে ৪০ মিনিটে। তদন্ত হস্তান্তরের নির্দেশ আসামাত্রই কলকাতা হাইকোর্টে আসল কেস ডায়েরি CBI-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। 


আরও পড়ুন: RG Kar Case: 'এই মামলায় রাজ্য যা করেছে, তা আমি ৩০ বছরে দেখিনি' মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির