এলাহাবাদ: জাতপাত এবং ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার আছে সবার। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এক মুসলিম যুবক বিয়ে করেছিলেন হিন্দু তরুণীকে। ধর্ম বদলে মুসলিম হন ওই তরুণী। এরপরই এফআইআর দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা, মা।
উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর জেলার বাসিন্দা সালামাত আনসারি এবং প্রিয়াঙ্কা খারওয়ার। দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা। এরপরই এলাহাবাদ হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করে ওই দম্পতি। বিচারপতি পঙ্কজ নকভি এবং বিচারপতি বিবেক অগ্রবালের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার পূর্ণ অধিকার তাঁদের আছে। বেঞ্চ জানিয়েছে, সালামাত এবং প্রিয়াঙ্কাকে হিন্দু বা মুসলিম হিসেবে আদালত দেখছে না। তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক। নিজেদের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে ওঁদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা একসঙ্গে আছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মানুষের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না। বরং সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুযায়ী, জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যেও পড়ে। এমনকী একই লিঙ্গের দুজন ব্যক্তিও একসঙ্গে থাকতে পারেন বলে মত আদালতের। আর এক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি বা পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।


গত ১১ নভেম্বরের এই রায় সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ্যে আনে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এদিকে লাভ জেহাদ রুখতে তৎপর দেশের বিজেপি-শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার। তাদের দাবি, মুসলিম যুবকরা প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করে ধর্ম বদলাতে বাধ্য করছে। তাই লাভ জেহাদ বন্ধে পুরনো দুটি রায়ের ভিত্তিতে নতুন আইন আনার তোড়জোড় করছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়ে অস্বস্তিতে পড়তে পারে তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ এবং ২০২০ সালে দুটি রায় দেয় আদালত। নূর জাহান মামলায় সুরক্ষা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এক দম্পতি। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। প্রিয়াংসি মামলায় ধর্মান্তকরণ করেন এক মুসলিম তরুণী। এই মামলাতেও সুরক্ষা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দম্পতি। চলতি বছর অক্টোবর মাসে রায় দেয় আদালত। এরপরই লাভ জেহাদ নিয়ে নয়া আইনের পথে এগয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি হরিয়ানা, মধ্য় প্রদেশ, কর্নাটকের মতো রাজ্য়ও এই আইনের পথে হাঁটছে।