নয়াদিল্লি: শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের এক যাত্রীর চার মাসের বাচ্চার দুধের প্যাকেটের ব্যবস্থা করে মানবিকতা, কর্তব্য বোধের উদাহরণ স্থাপন করলেন এক আরপিএফ জওয়ান। ইন্দর সিংহ যাদব নামে ওই কনস্টেবল ভোপাল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষণা করছিলেন, স্টেশনে ঢুকতে থাকা বেলগাঁও-গোরক্ষপুর শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা যাতে কেউ ট্রেন থেকে না নামেন। ট্রেনটি ভোপাল স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকলে তারই এক মহিলা যাত্রী, শরিফ হাসমি তাঁকে অনুরোধ করেন, যদি তাঁর চার মাসের বাচ্চার জন্য একটু দুধের ব্যবস্থা করা যায়। বেলগাঁওয়ে চেষ্টা করেও দুধ জোগাড় করতে পারেননি তিনি। একটা বাচ্চা দুধ পাচ্ছে না, শুনে মন খারাপ হয়ে যায় কনস্টেবল ইন্দরের। বাচ্চাটাও কাঁদছিল। সঙ্গে সঙ্গে ‘দু মিনিট অপেক্ষা করুন’, হাসমিকে বলেই দুধ কিনতে স্টেশনের ঠিক বাইরেই একটি দোকানে দৌড়ে যান ইন্দর। এদিকে তাঁর ছুটে যাওয়া আর দৌড়ে ফেরার সময়টুকুর মধ্যেই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চলতে শুরু করে দেয়। আস্তে আস্তে গতি বাড়তে থাকে ট্রেনের। স্টেশনের সিসিটিভি-তে ওঠা দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, এক হাতে সার্ভিস রাইফেল, আরেক হাতে দুধের পাউচ নিয়ে ইন্দর ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গেই ছুটছেন। শেষমেষ তাঁর প্রাণপণ প্রয়াস সফল হয়। ছুটন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে হাসমির হাতে তিনি পৌঁছে দেন দুধের পাউচ। চারদিন আগের এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই ইন্দরের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা হয়।
তবে বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়া কনস্টেবল বলেছেন, আমি নিশ্চিত ছিলাম, একবারও মনে হয়নি যে, দুধের পাউচটা দিতে পারব না। রোজ শরীরচর্চা করেন বলে নিজের ফিটনেসের ওপর অগাধ আস্থা আছে বলে জানালেন।
রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল তাঁর কর্তব্যবোধে মুগ্ধ হয়ে ট্যুইট করেছেন, রেল পরিবারের প্রশংসনীয় কাজ। আরপিএফ কনস্টেবল ইন্দর সিংহ যাদব অনুকরণযোগ্য কর্তব্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন। একটি চারমাসের বাচ্চার দুধ পৌঁছে দিতে তিনি ট্রেনের পিছন পিছন দৌড়েছেন। ওর জন্য গর্ব প্রকাশ করছি। ওর মানবিক ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছি।
রেলমন্ত্রী একটি ভিডিও ট্যুইট করেছেন যাতে বাচ্চাটার মা-কে বলতে শোনা যাচ্ছে, ইন্দর যাদবকে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ। তিনিই আসল হিরো।
গত ৫ বছর হল ভোপাল আরপিএফ স্টেশনে কাজ করছেন ইন্দর। আগে ছিলেন লখনউয়ে। তিন বছর আগেও তিনি দুটি বাচ্চাকে তাদের মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন। বাচ্চাদুটোকে ভোপাল স্টেশনে ফেলে ট্রেন মাকে নিয়ে চলে যায়। ইন্দর উদ্যোগ নিয়ে ব্যবস্থা করেন যাতে ওদের মা জুন্নারদেও স্টেশনে নেমে যান। তাঁর কাছে ওদের পৌঁছে দেন তিনি।