Russia Ukraine Crisis: শিয়রে সঙ্কট ! রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিল ইউক্রেন। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে সামরিক আইন জারির ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন ইউক্রেনের  প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি।


Russia Ukraine Conflict: ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ডিক্রি নম্বর ৬৪/২০২২-তে স্বাক্ষর করেছেন। ইউক্রেনে সামরিক আইন জারির উপর প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।  যাতে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৩০ দিনের জন্য দেশে জারি থাকবে সামরিক আইন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ান ফেডারেশনের সামরিক আগ্রাসনের কারণেই জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিল একটি প্রস্তাব এনেছে। সেই প্রস্তাব ও ইউক্রেনের আইন মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


Russia Ukraine Crisis:  সামরিক আইন আসলে কী ?
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, সামরিক আইন হল জরুরি সময়ে সামরিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা জারি করা একটি অস্থায়ী নিয়ম। যখন অসামরিক কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়েই এই কাজ শুরু করে সামরিক বাহিনী। যদিও এই সামরিক আইন ঘোষণার ক্ষেত্রে নানা বিচারব্যবস্থায় নানা নিয়ম রয়েছে। এখানে জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে মিলিটারি শাসন বা সামরিক শাসন জারি করা হয়।


Russia Ukraine Conflict: ইউক্রেনে সামরিক আইন কী ?
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ইউক্রেনের সংসদে একটি আইন গৃহীত হয়। ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো  এই আইন অনুসারে ইউক্রেনের ১০টি অঞ্চলে ৩০ দিনের জন্য সামরিক আইন প্রবর্তনের একটি ডিক্রি অনুমোদন করেন। পোল্যান্ডের ইস্টার্ন স্টাডিজ সেন্টার দ্বারা প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, এই বিলটি ৪৫০ আসনের সংসদে ২৭৬ জন ডেপুটি সমর্থন করেছিলেন। রিপোর্ট বলছে, গৃহীত বিলটি পোরোশেঙ্কোর প্রস্তাবের থেকে যথেষ্ট আলাদা ছিল। 


Russia Ukraine Crisis: ইউক্রেনের ভৌগলিক সীমারেখা অনুযায়ী, দশটি অঞ্চল রাশিয়ার সীমানা, আজভ সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সীমানা বরাবর অবস্থিত ।  এইসব জায়গায় কের্চ স্ট্রেইট ঘটনার পরে সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল। এই ঘটনার সূত্রপাত, ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর। যা পূর্ব ইউরোপের কের্চ প্রণালীতে ঘটেছিল।আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ছাপ ফেলে দিয়েছিল এই ঘটনা। সেবার তিনটি ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর জাহাজের উপর গুলি চালায় রাশিয়ান ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) ।  ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলি মারিউপোল বন্দরে যাওয়ার পথে কৃষ্ণ সাগর থেকে আজভ সাগর হয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। যা দেখেই এফএসবি কোস্টগার্ড নৌবাহিনীর জাহাজগুলির উপর গুলি চালায়। এই ঘটনার পরই জারি হয় বিশেষ আইন।


Russia Ukraine Conflict: সেন্টার ফর ইস্টার্ন স্টাডিজ দ্বারা প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পোরোশেঙ্কো ও তার সহকর্মীরা গৃহীত বিলে প্রদত্ত নাগরিক সাংবিধানিক অধিকারের ওপর বারবার জোর দিয়েছিলেন। বিলে বলা হয়েছিল, সাংবিধানিক স্বাধীনতাগুলি কোনওভাবে খর্ব করা হবে না। একমাত্র রাশিয়ান ফেডারেশন নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলিতে আগ্রাসন না দেখালে এই বিশেষ সামরিক আইন জারি করা হবে না। সেই সময় পোরোশেঙ্কো প্রাথমিকভাবে সমগ্র দেশে সামরিক আইন জারি করার জন্য একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।  প্রথমে ৬০ দিনের জন্য বলা হলেও পরবর্তীকালে ৩০ দিনে কমিয়ে আনা হয়েছিল এই আইনের মেয়াদ। কেবল ১০টি অঞ্চলের জন্ই আরোপ করা হয়েছিল এই সামরিক আইন।


Russia Ukraine Crisis: সামরিক আইন কী প্রভাব ফেলবে ইউক্রেনে ?
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত আর্টিকেল বলছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন,  তিনি রাশিয়ার আক্রমণের কারণে দেশে সামরিক আইন ঘোষণা করেছেন। জেলেনস্কি সকাল ৭ টার আগে জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে সামরিক আইনের কথা বলেছেন। যদিও এতে কী বিধিনিষেধ থাকবে তা স্পষ্ট করেননি।


Russia Ukraine Conflict: ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে সামরিক আইন নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে মিলিটারি কমান্ড ও অন্যান্য নির্বাহী সংস্থা ইউক্রেনের আইন দ্বারা পরিকল্পিত ব্যবস্থা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা, জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সামরিক আইনের আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে,ইউক্রেনের সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সাংবিধানিক অধিকার ও নাগরিকদের স্বাধীনতা সামরিক আইন জারির কারণে সাময়িকভাবে সীমিত হতে পারে। এছাড়াও এই সময়ে জনগণের আইনি অধিকার ও স্বার্থের ওপর অস্থায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।বিবৃতিতে আরও  বলা হয়েছে,  ইউক্রেনের মন্ত্রিসভাকে অবিলম্বে ইউক্রেনে সামরিক আইনকে নিশ্চিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে। 


Russia Ukraine Crisis: বর্তমানে সামরিক আইন অনুযায়ী, ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থায় স্থানীয় রাজ্য প্রশাসন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলিকে  একক স্তরের নাগরিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের এই সামরিক আইনের বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব ও বিদেশি কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে অবহিত করেছে।  আগামী দিনেও এই কাজ জারি রাখতে হবে ইউক্রেনকে। সামরিক আইন জারির পর নাগরিক অধিকার সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে হবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সেখানে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা খর্বিত হয়েছে কিনা তা জানাতে হবে মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রসংঘের কাছে।


এদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী দেশে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পরই দ্রুতগতিতে হামলা চালায় রুশ বাহিনী।  এর কয়েক ঘণ্টা পরেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেন সেনার বিমান ঘাঁটির পরিকাঠামো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। ধ্বস্ত করে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবারই ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের পর অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।  এরপর সমগ্র ইউক্রেন জুড়েই শোনা গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, পুরোদস্তর অভিযান শুরু হয়েছে।