কিয়েভ: সম্প্রতি ইউক্রেনে সেনা অভিযান করেছে রাশিয়া (russia)। তার আগে দীর্ঘদিন ধরেই তৈরি হয়েছিল যুদ্ধের আবহ। ইউরোপে যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি ফেরাতে বিশ্বের একাধিক দেশ মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেসব বিফলে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে আক্রমণ হেনেছে রাশিয়ার সেনা।


রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইউরোপের (europe) অন্যতম বৃহৎ আয়তনের দেশ ইউক্রেনের। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে কিনা তা নিয়েই শুরু এবারের সংঘাত। নিজের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে রাশিয়ার দাবি ছিল, কোনওভাবেই ইউক্রেনকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্দান অ্যালায়েন্স ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (nato) সদস্য হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে ন্যাটোর সদস্যপদের দাবি জানায় ইউক্রেন (ukraine)। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা হলে রাশিয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যেত ন্যাটো সেনা। যা না পসন্দ রাশিয়ার। কেন? তা জানতে নজর রাখতে হবে দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে।


১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার (ussr) পতন ঘটে। সোভিয়েত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ গঠিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনও। ইউক্রেনের সমাজ-রাজনীতিতে এখনও সোভিয়েত প্রভাব রয়েছে। সেদেশের রাষ্ট্রনীতি প্রায়শই ইউরোপমুখী বা রাশিয়ামুখী হয়ে দোলাচলে থেকেছে। পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বাড়াতে আমেরিকার নজরে থেকেছে ইউক্রেন। পাশাপাশি সেদেশে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা করেছে রাশিয়াও।


ক্রিমিয়া যুদ্ধ
ইউক্রেনের স্বাধীনতার পর দুই দেশের সবচেয়ে বড় সংঘাত হয় ২০১৪ সালে। যদিও তার সূত্রপাত ২০১৩ সালে। সেই বছর রাশিয়াপন্থী ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ইউক্রেনের চুক্তি আলোচনা স্থগিত করেন। তারপরেই সেদেশে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,সেই সময় দেশ ছেড়়ে পালান ইয়ানুকোভিচ। মসনদে বসেন আমেরিকা ও ইউরোপপন্থী পোরোশেঙ্কো। তারপরেই ক্রিমিয়া অভিযান করে রাশিয়া। ইউক্রেনের দক্ষিণ দিকে থাকা ক্রিমিয়া দ্বীপ দখল নেয় রাশিয়ার বাহিনী।


উত্তপ্ত ডনবস
ইউক্রেনের পূর্বপ্রান্তের ২টি এলাকা। ডনেৎস্ক এবং লুহান্সক। এই দুটি এলাকা নিয়েই একত্রে ডনবস এলাকা বলা হয়। ২০১৪ সালে সেখানে রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীরা ইউক্রেন থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তারপরেই ইউক্রেন সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিদ্রোহীরা। সেই সময় ওই বিদ্রোহীদের সমর্থন জোগায় রাশিয়া। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামানোর জন্য কিছুদিন পরে মিন্স চুক্তি (minsk agreement) হয়। তারপরেও কমেনি উত্তাপ। 


২০২১ সালে জেলেনস্কি ইউক্রেনের মদনদে বসেন। তারপরেই তিনি ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন জানান। তা নিয়েই ফের রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কে অবনতি ঘটে। ইউক্রেন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হলে, রাশিয়ার সঙ্গে কোনওরকম সামরিক সংঘর্ষ ঘটলেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে ন্যাটো (nato)। সেই কারণেই তীব্র আপত্তি রয়েছে রাশিয়ার। সেই নিয়ে চাপানউতোরের মাঝেই ইউক্রেনে আক্রমণ শানিয়েছে পুতিনের রাশিয়া। ইতিমধ্যেই ঝরেছে একাধিক প্রাণ। ফের কি রক্তস্রোতে ভিজবে ইউরোপের মাটি?


আরও পড়ুন: রুশ আক্রমণের পর ইউক্রেনে বেসমেন্টে আশ্রয় ভারতীয় পড়ুয়াদের, দেশে ফেরানোর আর্জি