নয়াদিল্লি: রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যু আরও এক ভারতীয়র। সেই নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে কাজে যোগ দিয়েছেন যে সমস্ত ভারতীয়রা, তাঁদের সকলকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হল তারা। সেই মর্মে মস্কোকে ইতিমধ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানাল বিদেশ মন্ত্রক। (Russia-Ukraine War)


সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কেরলের ত্রিশূরের বাসিন্দা, ৩২ বছর বয়সি বিনিল বাবু পেশায় ছিলেন বিদ্যুৎকর্মী। তাঁর এক আত্মীয়, ২৭ বছর বয়সি জৈন টিকে-ও একই পেশায় ছিলেন। দু'জনেই IIT মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা করেছিলেন। গত বছর ৪ এপ্রিল রুশ সেনার হয়ে কাজ করতে রাশিয়া রওনা দেন তাঁরা। সেখানে বিদ্যুৎকর্মী এবং পাইপ পরিষ্কারের কাজ করতে যান। (Indians Working in Russia-Ukraine war)


কিন্তু বিনিল এবং জৈনের পরিবারের দাবি, রাশিয়া পৌঁছনো মাত্রই ওই দু'জনের কাছ থেকে ভারতের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। নিরাপদ জায়গায় কাজ করার জন্য গেলেও, তাঁদের যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হয়। রুশ সেনার সহযোগী হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা হয় তাঁদের। যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনের ভূখণ্ডের একটি অংশ, যা এখন রাশিয়ার দখলে রয়েছে, সেখানে হঠাৎ একলা হয়ে যান বিনিল এবং জৈন। সেই সময় একটি ড্রোন আছড়ে পড়ে এলাকায়। সেই ড্রোন বিস্ফোরণে মারা যান বিনিল। গুরুতর আহত জৈন। 


বিষয়টি সামনে আসতেই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়। বিদেশমন্ত্রকের মুখরপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, "কেরলের বাসিন্দা এক ভারতীয় নাগরিকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর খবর পেলাম। রুশ সেনায় তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল। আর একজন আহত হয়েছেন বলে জেনেছি। মস্কোয় চিকিৎসা চলছে তাঁর।" মস্কোয় ভারতীয় দূতাবাস ওই যুবকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। পাশাপাশি, বিদেশমন্ত্রক আলাদা করে রুশ সরকারের সঙ্গে কথা চালাচ্ছে, যাতে নিহতের দেহ তাড়াতাড়ি দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। দেশে ফেরানো যায় আহতকে। সেই সঙ্গে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয়দের যাতে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, সেই নিয়েও কথা চলছে।


এ ব্যাপারে দিল্লি কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, দিল্লিতে রুশ দূতাবাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্ত ভারতীয় নাগরিককে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে সেখানে। এর আগে, গতবছর অক্টোবর মাসে বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্র জানান, রুশ সেনা থেকে ৮৫ জন ভারতীয়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ জনকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। গত বছর জুলাই মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ও একই দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পর অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনে দেখাও হয় তাঁদের। 


বিদেশমন্ত্রকের তরফে নিহত বিনিলের পরিবারকে সমবেদনা জানানো হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার হয়ে ভারতীয়দের যুদ্ধে অংশ নেওয়াকে ঘিরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রকেও। কারণ রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত আট জনের বেশি ভারতীয়ের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। গতবছর অগাস্ট মাসে সেই খবরে সিলমোহর দেয় বিদেশমন্ত্রকও। রুশ সেনায় নাম লেখানো ৬৩ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।


কিন্তু ভারত থেকে এত সংখ্যক মানুষ রাশিয়ায় যুদ্ধে যোগ দিতে যাচ্ছেনই বা কী করে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গতবছর জুলাই মাসে একটি দালালচক্রেরও সন্ধান মেলে। মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতীয়দের তারা রাশিয়ায় যুদ্ধ করতে পাঠাচ্ছে বলে জানা যায়। বেশ কিছু ভিডিও-ও সামনে আসে, যেখানে পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে যুদ্ধ করতে যাওয়া যুবকদের রুশ সেনার উর্দি পরে থাকতে দেখা যায়। তাঁরা জানান, চাকরির আশ্বাস দিয়ে, ভুল বুঝিয়ে তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করুক বলেও আবেদন জানান তাঁরা। সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেসও। তাদের যুক্তি ছিল, দরিদ্র, বেকার যুবকদের টাকার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার নির্বিকার।