নয়াদিল্লি: একসঙ্গে ১৩ রাজ্যের রাজ্যপাল বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে ফের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৪-এর লোকসভা এবং চলতি বছরে পূর্বনির্ধারিত বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই এমন সিদ্ধান্ত বলে দাবি উঠছে যেমন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে রাজ্যপাল নিযুক্ত করা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির রাজ্যপাল নিযুক্ত হওয়ার ঘটনা যদিও নতুন নয়, কিন্তু রাম মন্দির রায় দেওয়া ওই বিচারপতিকে অবসর নেওয়ার ঠিক পর পরই রাজ্যপালের আসনে বসানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা (New Governors Appointment)।


অবসর নেওয়ার ঠিক পর পরই রাজ্যপালের আসনে বসানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে তরজা


সব মিলিয়ে ছয় সপ্তাহ আগে অবসর নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আবদুল এস নাজির (Justice S Abdul Nazeer)। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ, নোটবন্দিকে বৈধ সিদ্ধান্ত বলে ঘোষণার রায়ের অংশ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্যপাল হিসেবে যে নতুন নয় জনের নাম ঘোষণা করেছেন, তাতে নাম রয়েছে প্রাক্তন বিচারপতি নাজিরের। আর তা নিয়েই কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। এই নিযুক্তি ভারতে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে দাবি তাদের।


কেন্দ্রের সমালোচনায় দেশের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির একটি মন্তব্য তুলে ধরেছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা জনসংযোগ প্রধান জয়রাম রমেশ জেটলির ২০১২ সালের একটি মন্তব্য রিট্যুইট করেছেন, যাতে ২০১২ সালে জেটলিকে বলতে শোনা যায়, "অবসরের মুখে রায়ঘোষণা উপর অবসর পরবর্তী রোজগারের প্রভাব থাকে, যা বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য বিপজ্জনক।" গত তিন বছরে এই তত্ত্ব প্রমাণিত বলে মত জয়রামের।


এ নিয়ে কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, "নির্দিষ্ট করে কোনও ব্যক্তির কথা বলছি না আমরা। ব্যক্তিগত ভাবে বিচারপতিকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি আমি। ওঁকে চিনি। বিষয়টি ওঁকে নিয়ে নয়। নৈতিক ভাবে এই রীতির বিরোধিতা করছি আমরা। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করছি আমরা।"


আরও পড়ুন: Narendra Modi: মোদির মুখে 'তেজস' স্তুতি! শুরু এশিয়ার বৃহত্তম এয়ারোস্পেস শো 'এয়ারো ইন্ডিয়া ২০২৩'


কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা তথা রাজ্যসভা এএ রহিমও। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত 'গণতন্ত্রের উপর কালির দাগ' হয়ে রইল  বলে মত তাঁর। বিচারপতির পদ গ্রহণ করা উচিত ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "বিচারপতি আবদুল নাজিরের নিযুক্তি দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। ওঁর এই প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত হয়নি। আইন ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাওয়া কাম্য নয়। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের উপর কালির দাগ হয়ে রইল।"


অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির রাজ্যপাল হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় বলে যদিও পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক বিএল সন্তোষ। কিন্তু গত ৪ জানুয়ারি অবসর গ্রহণের পর এত তাড়াতাড়ি প্রাক্তন বিচারপতি নাজিরের রাজ্যপাল নিযুক্ত হওয়া নিয়েই প্রশ্ন। এর আগে, সুপ্রিম কোর্টের দুই প্রাক্তন বিচারপতি রাজ্যপাল হন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম এবং প্রাক্তন বিচারপতি এম ফতিমা বিবি। ২০১৩-র জুলাই থেকে ২০১৪-র এপ্রিল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন সদাশিবম। মোদি সরকার ২০১৪ সালে তাঁকে কেরলের রাজ্যপাল নিযুক্ত করে। ১৯৯২ সালে অবসর গ্রহণ করেন প্রাক্তন বিচারপতি ফতিমা। সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি তিনি। ১৯৯৭ সালে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। 


কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা তথা রাজ্যসভা এএ রহিমও


২০০১ সালের ১ জুলাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রাক্তন বিচারপতি ফতিমা। কারণ সে বছর মে মাসে জয়ললিতাকে সরকার গড়তে আহ্বান জানান তিনি। মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় ৭৮ বছরের ডিএমকে সভাপতি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধিকে এবং তাঁর সহযোগীদের। সেই নিয়ে কেন্দ্রের তৎকালীন অটল বিহারি বাজপেয়ী সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাত বাধে প্রাক্তন বিচারপতি ফতিমার। আইনের শাসন কায়েম রাখার পরিবর্তে ব্যক্তিগত মতাদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে সেই সময়ও মন্তব্য করেন জেটলি।