নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদে (EAC-PM) জায়গা পেলেন সঞ্জয়কুমার মিশ্র। পরিষদের সচিব পদে নিযুক্ত করা হল তাঁকে। ১৯৮৪ ব্যাচের Indian Revenue Service (IRS) অফিসার সঞ্জয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রাক্তন ডিরেক্টর। এর আগে ED প্রধান হিসেবে বার বার মেয়াদবৃদ্ধি করা হয় সঞ্জয়ের। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হয়। সেই সঞ্জয়কে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের সর্বক্ষণের সদস্য করা হল, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সঞ্জয় ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পেলেন বলে দাবি বিরোধীদের। (Sanjay Kumar Mishra)
EAC-PM একটি স্বতন্ত্র সংগঠন, যারা অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দেয়। সেই কমিটির স্থায়ী সদস্য নিযুক্ত হলেন সঞ্জয়। ২০১৮ সালে প্রথমে দু’বছরের জন্য ED-র ডিরেক্টর নিযুক্ত হন তিনি। কিন্তু কার্যকালের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও, বারংবার তাঁর মেয়াদবৃদ্ধি করে কেন্দ্র। তৃতীয় বার তাঁর কার্যকালের মেয়াদবৃদ্ধি করা হলে ২০২৩ সালে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছয়। সেখানে তৃতীয় বার সঞ্জয়ের কার্যকালের মেয়াদবৃদ্ধিকে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত। তার পরও ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় সঞ্জয়কে। (PM Economic Advisory Council)
উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্ম সঞ্জয়ের। গোরক্ষপুরেই প্রথম পোস্টিং পান আয়কর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে। সঞ্জয় ED-র ডিরেক্টর নিযুক্ত হওয়ার পর প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে বিজেপি বিরোধী শিবিরের নেতাদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি মামলা দায়ের করে ED. তাঁর আমলে ED প্রায় ৪০০০ মামলা দায়ের করে। তল্লাশি অভিযান চালায় প্রায় ৩০০০টি। সঞ্জয়ের আমলেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির শরদ পওয়ার, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ, আর এক মন্ত্রী নবাব মালিক, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুখ আবদুল্লা ও ওমর আবদুল্লা, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, তামিলনাড়ুর সেন্থিল বালাজি, তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী শিবিরের ক্ষমতাশালী নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ED.
সেই নিয়ে ED-র বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধীরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, বিরোধীদের হেনস্থা করতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ED-কে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। বার বার সঞ্জয়ের মেয়াদবৃদ্ধি নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুললেও, তাঁর আমলে যে যে পদক্ষেপ করে ED, তা যদিও বাতিল করেনি আদালত। সঞ্জয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পাওয়ার পর ফের সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেল লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে মোদি সরকার দু’বার সঞ্জয় মিশ্রের কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ওঁকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে। এতদিন যিনি ED-কে দিয়ে বিরোধীদের নিশানা করছিলেন, এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পেলেন। এত নির্লজ্জতার পরও মোদি ভীত কেন?’
এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন বেরি। অন্য সদস্যরা হলেন, সঞ্জীব সান্যাল (সদস্য), শমিকা রবি (সদস্য), রাকেশ মোহন (পার্ট টাইম সদস্য), সজ্জিদ চিনয় (পার্ট টাইম সদস্য), নীলকান্ত মিশ্র (পার্ট টাইম সদস্য), নীলেশ শাহ (পার্ট টাইম সদস্য), টিটি রামমোহন (পার্টটাইম সদস্য), পুনম গুপ্ত (পার্ট টাইম সদস্য)। এবার সেখানে জায়গা পেলেন সঞ্জয়।