নয়াদিল্লি: রাশিয়া বনাম ইউক্রেন, ইজরায়েল বনাম হামাস যুদ্ধ চলছেই। সেই আবহেই চিনকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমের স্বতন্ত্র শিনজিয়াং প্রদেশে পরমাণু সামরিক তৎপরতা তুঙ্গে। সেখানে চিন পরমাণু শক্তি পরীক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে শীঘ্রই সেখানে চিন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে বা সাবক্রিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট অর্থাৎ রাসায়নিক বিস্ফোরক ব্যবহার করে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলে দাবি উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে। (China Nuclear Test Preparations)
আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে এ নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাশিয়া বনাম ইউক্রেন এবং ইজরায়েল বনাম হামাস যুদ্ধে এমনিতেই আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টাতে শুরু করেছে। আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে সংঘাতও আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই আবহেই নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির ধার বাড়াতে তৎপর হয়েছে চিন। নিজেদের সামরিক শক্তির আরও বিস্তার ঘটাচ্ছে তারা। (China Nuclear Tests)
আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে, ১৯৬৪ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম পরমাণু অস্ত্রটি পরীক্ষা করে চিন। সেবারও শিনজিয়াং প্রদেশের লপ নুর এলাকায় পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, নজরদারি এড়াতে ওই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছিল প্রজেক্ট ৫৯৬। এবারও ওই লপ নুর এলাকাতেই ফের সক্রিয়তা চোখে পড়ছে বলে খবর। ঢেলে সাজানো হয়েছে পরিকাঠামো। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নির্মাণও চোখে পড়েছে এমনকি উল্লম্ব ভাবে খোঁড়া একাধিক সুড়ঙ্গও চোখে পড়েছে বলে কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: AI Risk Factors and Solutions: AI ব্যবহার করে দেশে আরও বড় সাইবার অপরাধ ২০২৪-এ ? ভয় ধরাচ্ছে রিপোর্ট
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লপ নুর এলাকায় নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে চিন। পার্বত্য এলাকায়, পাশাপাশি একাধিক উল্লম্ব সুড়ঙ্গ গড়ে তোলা হচ্ছে। আগেও ওই সুড়ঙ্গগুলি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এলাকায় একাধিক নতুন রাস্তাও তৈরি করা হচ্ছে বলে ধরে পড়েছে কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে। পরমাণু বিশেষজ্ঞ টং ঝাও নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যা তথ্য সামনে এসেছে, তাতে ইঙ্গিত মিলছে যে, নতুন করে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন।
বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং রাশিয়ার থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয় রয়েছে চিনের। আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সমীকরণে যে ওঠাপড়া চলছে, সেই নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তাই সময় থাকতেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। পেন্টাগনের অনুমান অনুযায়ী, যে হারে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে চিন, ২০৩৫ সাল নাগাদ চিনের হাতে প্রায় ১৫০০ পরমাণু শক্তিসম্পন্ন ওয়ারহেড থাকবে, যা গত ৫০ বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।
চিনের এই পরমাণু সক্রিয়তা ভারতের জন্যও যথেষ্ট উদ্বেগের। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গত কয়েক বছরে একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ভারত এবং চিন। নজরদারিও বেড়েছে দুই তরফে। তাই লপ নুরে চিনের এই সক্রিয়তায় দিল্লিও নড়েচড়ে বসেছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে খবর। তবে চিনের এই তৎপরতা আকস্মিক কিছু নয় বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। কয়েক মাস আগে আমেরিকার কংগ্রেসেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
আমেরিকার কংগ্রেসের দুই পক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত Strategic Posture Commission-এর রিপোর্টে দেশের সরকারকে সতর্ক করা হয়। বলা হয়, তাইওয়ানকে নিয়ে চিনের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে এক দিকে। অন্য দিকে আবার, ইউক্রেন নিয়ে সংঘাত চলছে রাশিয়ার সঙ্গে। আগামী দিনে একই সময়ে দুই দেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধতে পারে আমেরিকার।
সামরিক শক্তির নিরিখে চিন এবং রাশিয়া যে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে, তা-ও তুলে ধরা হয় রিপোর্টে। পেন্টাগনের একটি রিপোর্ট তুলে ধরে বলা হয়, চিন এবং রাশিয়া, দুই দেশের সামরিক শক্তি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৩৫ নাগাদ শুধু চিনের কাছেই ১৫০০ পরমাণুশক্তি সম্পন্ন ওয়ারহেড থাকবে বলে জানানো হয়। বায়ুসেনার হাতে আধুনিক অস্ত্র তুলে দিতে এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে দুই দেশই কোনও ক্ষেত্রে আপস করছে না বলে উঠে আসে রিপোর্টে। সেই আবহেই কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি সামনে এল।