গয়া: স্ত্রী-র মৃত্যু হয়েছিল চিকিৎসার অভাবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ছিল না কোনও রাস্তা। সেই ক্ষোভ থেকেই শুরু হয় রাস্তা তৈরির কাজ। পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন দশরথ মাঞ্ঝি। মাউন্টেন ম্যান মাঞ্ঝির সেই কীর্তি সবারই জানা। এবার আরও এক মাঞ্ঝির অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার কাহিনির সাক্ষী থাকল বিহারবাসী তথা সারা দেশ। এক হাতে ১০ হাজার চারা পুঁতে মরুভূমিতে বিরাট ফলের বাগান বানিয়ে ফেললেন সত্যেন্দ্র গৌতম মাঞ্ঝি।


বিহারের গয়া জেলার বেলাগঞ্জ ব্লকের ইমালিয়াচকের গ্রামের বাসিন্দা সত্যেন্দ্র গৌতম মাঞ্ঝি। ফলগু নদীর একটি দ্বীপে এই বিরাট বাগান বানিয়েছেন তিনি। যা ছিল একরকম মরুভূমি। চারদিকে ছিল শুধু বালি। অনুর্বর সেই বালুকার স্তরে সবুজের প্রাণ এনেছেন তিনি। যেখানে মূলত আছে পেয়ারা গাছ। সত্যেন্দ্র গৌতম মাঞ্ঝি জানিয়েছেন, তাঁর এই কাজের অনুপ্রেরণা মাউন্টেন ম্যান দশরথ মাঞ্ঝি। শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন, এক সময় দশরথ মাঞ্ঝি তাঁর বাড়িতেও এসেছিলেন। ১৫ বছর আগে মাউন্টেন ম্যানের সঙ্গে সেই সাক্ষাৎই বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। এরপরই একহাত ১০ হাজার চারা পুঁতে বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।


সংবাদমাধ্যমে সত্যেন্দ্র গৌতম মাঞ্ঝি বলেন, "দশরথ মাঞ্ঝি আমাকে এই ফলের চারা পুঁততে বলেছিলেন। সেই সময় এই অঞ্চলে ছিল শুধুই বালি। বাগান তৈরি করতে সত্যিই খুব সমস্যা হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে জল এনে এই প্রথম চারা পোঁতা হয়। গাছে জল দেওয়ার জন্য বহুদূর থেকে জল নিতে হত। একইসঙ্গে তিনি জানান, অনেক সময় প্রাণীরা গাছের পাতা, ফলে খেয়ে নেয়। তাই ওই অঞ্চল আমি ঘিরে রেখেছি।''


মাগাধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছেন। সত্যেন্দ্রর এই উদ্যোগ জানার পরই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। পরিবেশের প্রতি এই অবদানের কথা জানতে পেরে সত্যেন্দ্রকে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিশনের সদস্য পদ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।  একইসঙ্গে মাগাধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য তিনি। এখনও নিজে হাতেই বাগান পরিচর্যা করেন সত্যেন্দ্র। শুধু তাই নয়, পেয়ারা বিক্রি করেই তাঁর সংসার চলে। তাঁর কথায়, দেশবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, আরও বেশি বৃক্ষরোপণ করুন।