নয়াদিল্লি: পোষ্য সারমেয় দাঁত বসায়নি শরীরে। সামান্য আঁচড়ে দিয়েছিল। তাই বিশেষ গা করেননি। নিজের জীবন দিয়ে সেই উদাসীনতার মাশুল গুনলেন গুজরাতের পুলিশ আধিকারিক বনরাজ মঞ্জরিয়া। আর প্রশ্ন উঠছে, জলাতঙ্ক নিয়ে কি যথেষ্ট সচেতনতা রয়েছে সমাজে? কুকুর বা বিড়াল না কামড়ালেও, তাদের আঁচড়ও কি সমান বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে? (Rabies in India)

Continues below advertisement

নিজের বাড়ির পোষা কুকুর আঁচড়ে দিয়েছিল বনরাজকে। কাউকেই সেকথা জানাননি তিনি, কোনও চিকিৎসাও করাননি। গক ১৫ সেপ্টেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বনরাজকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। মৃত্যুর কারণ সামনে আসতে জানা যায়, জলাতঙ্ক বাসা বেঁধেছিল তাঁর শরীরে। তাঁর পায়ে দু’টি আঁচড়ের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। (Rabies Through Bite and Scratch)

শুধু কুকুরের আঁচড়ই নয়, বিড়ালের আঁচড়ও সমান বিপজ্জনক বলে মত চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের মতে, বাড়ির পোষ্যও অনেক সময় রাস্তার কুকুর-বিড়ালের সংস্পর্শে আসে। সঠিক সময়ে টিকা না দেওয়া হলে, তারাও জলাতঙ্কের বাহক হয়ে ওঠে। ফলে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে আঁচড় বোঝাও যায় না। এতটাই হালকা হয় যে, চোখে পড়ে না ছড়ে যাওয়া অংশ। 

Continues below advertisement

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্ষত বোঝা না গেলেও, কুকুর বা বিড়াল আঁচড়ে দিয়েছে মনে হলে, শরীরের ওই অংশে স্পিরিট ছোঁয়াতে পারেন। জ্বালা করলে বুঝতে হবে, আঁচড় লেগেছে। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জেকশন নিতে হবে, খেতে হবে ওষুধ। নিজে নিজে চিকিৎসা না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। 

জলাতঙ্ক প্রাণঘাতী রোগ। এক্ষেত্রে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। টিকার ডোজ অসম্পূর্ণ রাখা যাবে না। পোষ্যকে আগে থেকে টিকা দেওয়া থাকলেও, পোষ্য যদি রাস্তার কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে নাও মেশে, সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্য় প্রয়োজন। কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটালে আগে থেকে টিকা নিয়ে রাখাই কাম্য।

জলাতঙ্কের জন্য দায়ী Lyssavirus Genus ভাইরাস। পোষ্যর কামড় এবং আঁচড় থেকেই এই রোগ ছড়ায় মানুষের মধ্যে। পোষ্যর লালা থেকে মূলত ভাইরাস ছড়ালেও, আঁচড় থেকেও বিপদ হতে পারে। এমনকি এক রোগীর থেকে অন্য় রোগীর শরীরেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ। সরাসরি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতে আঘাত হানে এই ভাইরাস। জ্বর, উৎকণ্ঠা, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, হ্যালুশিনেসন, জলে আতঙ্কের মতো উপসর্গ দেখা যায় রোগীর মধ্যে। তাই পোষ্য কামড়ালে বা আঁচড়ালে উদাসীন থাকা উচিত নয় একেবারেই।

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে জলাতঙ্কে মৃত্যু ৭৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। কিন্তু Lancet-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর ভারতে এখনও কমপক্ষে ৫ হাজার ৭২৬ জন জলাতঙ্কে মারা যান। পশুর কামড় খান প্রায় ৯০ লক্ষ ভারতীয়, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই কুকুরের কামড়।