নয়াদিল্লি: তিলে তিলে গড়ে তোলা সংগ্রাম, হাজার হাজার মানুষের রক্তের ধারায় ভেজা মাটি, তার উপর দাঁড়িয়েই স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ভারত।  রক্তাক্ত সেই ইতিহাস এবং সবশেষে শৃঙ্খলমুক্তির স্মারক হিসেবে পাওয়া রাজদণ্ড তথা ‘সেঙ্গল’ এ বার জায়গা পেতে চলেছে নবনির্মিত সংসদভবনে (Sengol in New Parliament Building)। আগামী ২৮ মে নয়া সংসদভবনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। নিজেহাতে সেটি সংসদভবনে প্রতিস্থাপন করবেন (New Parliament Building)। 


দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন ইংরেজ শাসকের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত। তবে তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল কিছু দিন আগে থেকেই। খাতায় কলমে ক্ষমতার হস্তান্তর না হয় হল, কিন্তু সেই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখার ভাবনাচিন্তাও চলছিল। ভারতীয় রীতিনীতি কী বলে, জানতে চান লর্ড মাউন্টব্যাটেন। 


তাতে সি রাজাগোপালাচারীর পরামর্শ নেওয়া সঙ্গত মনে হয় জওহরলাল নেহরুর (Jawaharlal Nehru)। চোল সাম্রাজ্যে রাজদণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথা চালু ছিল, যার মাধ্যমে রাজধর্ম পালনের অঙ্গীকার করতেন সেই যুগের রাজারা।  স্বাধীন ভারতে গণতন্ত্রের সূচনাও সেই প্রথা মতোই হওয়া উচিত বলে পরামর্শ দেন গোপালাচারী। সেই মতো রাজদণ্ডের অনুকরণে ‘সেঙ্গল’ তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 


আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: 'সৌগত রায় বড় বিজ্ঞানী', বোমা মন্তব্যে খোঁচা দিলীপের


তাঞ্জোরের ধার্মিক মঠ, অধিনামের প্রধান পুরোহিতের নির্দেশে তৈরি হয় ওই ‘সেঙ্গল’। ‘সেঙ্গল’ শব্দটি এসেছে তামিল শব্দ ‘সেম্মাই’ থেকে, যার অর্থ ন্যায়পরায়ণত। রাজা ন্য়ায়ের পথে চলবেন, নিরপেক্ষ থেকে রাজধর্ম পালন করবেন, চোল সাম্রাজ্যে রাজদণ্ড হস্তান্তর প্রথার আড়ালে নিহিত বার্তা ছিল তেমনই। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু সেই অঙ্গীকার নিয়েই স্বাধীন ভারতের শাসনভার নিজের হাতে নেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট রাত ১০টা বেজে ৪৫ মিনিটে নেহরুর হাতে ‘সেঙ্গল’ তুলে দেন মাউন্টব্যাটেন। 


ওই সেঙ্গল তৈরি করতে সেই সময় তামিলনাড়ু থেকে দিল্লি উড়িয়ে আনা হয়েছিল তিন স্বর্ণকারকে। দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুট, গাত্রবর্ণ সোনালী, মাথার উপর বসানো শিবের বাহন ‘নন্দী’।  প্রথমে সেটির শুদ্ধিকরণ হয়। পাঁচ ফুট দীর্ঘ শোভাযাত্রা করে সেটিকে নেহরুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজেন্দ্রপ্রসাদ এবং বাকিদের উপস্থিতিতে সেটি গ্রহণ করেন নেহরু। এতদিন সেটি এলাহাবাদের মিউজিয়ামে রাখা ছিল। 


প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি  নয়া সংসদভবনে এ বার জায়গা পেতে চলেছে সেই ‘সেঙ্গল’। আগামী ২৮ মে শোভাযাত্রা করে সেটি নিয়ে যাওয়া হবে নয়া সংসদভবনে। নতুন করে শুদ্ধিকরণ হবে।  আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চার পর সেটিকে একটি কাচের বাক্সে প্রতিস্থাপিত করবেন মোদি। সেই বাক্স রাখা থাকবে স্পিকারের চেয়ারের পাশেই। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে, ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নয়া সূর্যোদয়ের প্রতীক হিসেবেই নয়া সংসদভবনে জায়গা পাচ্ছে ওই ‘সেঙ্গল’।