কোচি: প্রার্থনাসভায় পর পর বিস্ফোরণ। তাতে কেঁপে উঠল কেরল। রবিবার কোচিতেএকটি কনভেনশন সেন্টারে খ্রিস্টানদের প্রার্থনাসভা চলছিল। ২৭ অক্টোবর থেকে তিনদিনের ওই প্রার্থনাসভায় প্রার্থনা শুরু হয়। রবিবার ছিল শেষ দিন। আর এদিন প্রার্থনা চলাকালীনই পর পর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। ওই কনভেনশন সেন্টারে প্রায় ২০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। (Kerala Blast)


কালামাসেরিতে জামরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অ্যান্ড এগজিবিশন সেন্টারে ওই সমাবেশের আয়োজন হয়েছিল। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী জেহোবা সদস্যরা ওই প্রার্থনাসভায় উপস্থিত ছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একাধিক ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে জেহোবা সদস্য হলেন তাঁরা, যাঁরা খ্রিস্টান হিসেবে ধর্ম পরিচয় দিলেও, ঈশ্বর, তাঁর সন্তান এবং পবিত্র আত্মার মিলনের তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। (Jehovah’s Witnesses)


জেহোবা সদস্যরা একেশ্বরবাদী। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে শুধুমাত্র জেহোবার আরাধনা করেন, যিনি কিনা আব্রাহাম, মোজেস এবং জিশুরও দেবতা। তাঁদের বিশ্বাস, স্বর্গে ঈশ্বরের রাজপাট সামলান জিশু। তিনি রাজা, কিন্তু ঈশ্বর নন। বাইবেলের কথা জেহোবা অনুগামীদের কাছে ঈশ্বরের বার্তা। এঁরা বড়দিন বা ইস্টার পালন করেন না। জেহোবাদের বিশ্বাস, বড়দিন, ইস্টারের মতো উৎসব পৌত্তলিক আচারের মধ্যে পড়ে।


আরও পড়ুন: Shashi Tharoor on Kerala Blast: ধর্মীয় সমাবেশে পর পর বিস্ফোরণ, ধ্বংসের পথে হাঁটছে কেরল! স্তম্ভিত তারু


জেহোবা অনুগামীরা ধর্মপ্রচারমূলক কার্যের জন্যও পরিচিত। দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষের সামনে 'সত্য' তুলে ধরেন এঁরা। এঁদের মতে, পৃথিবী ধ্বংস হতে আর বেশি দেরি নেই।  আর তা হলে ধরাধামে ঈশ্বরের রাজপাট চালু হবে, তাতে  ঈশ্বরের লক্ষ্যপূরণ হবে। গোটা দুনিয়ায় এমন জেহোবা অনুগামীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। 


১৮৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার পাদরি চার্লস টেজ রাসেল বাইবেল পড়ুয়া আন্দোলনের সূচনা ঘটান। সেই থেকেই জেহোবাদের উত্থান। বর্তমানে নিউইয়র্ক এবং ওয়ারউইকে জেহোবাদের অভিভাবক সংস্থা রয়েছে। জেহোবাদের মতাদর্শ যাঁরা প্রচার করে, তাদের বলা হয় ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি। পেনসিলভেনিয়ায় তাদের দফতর রয়েছে। সদর দফতর ওয়ারউইকে।


জেহোবা অনুগামীরা সাধারণত অন্য ধর্মীয় সংগঠনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। তাদের ওয়েবসাইট jw.org -তে বলা রয়েছে, রাজনৈতিক বিষয়ে জেহোবাদের অবস্থান নিরপেক্ষ। অন্য কোনও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে কোনও সংযোগ নেই তাদের। প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করেন জেহোবারা। কোনও বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে না।


jw.org ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তাদের মিনিস্টারের সংখ্যা ৫৬,৭৪৭. এঁরা বাইবেল পড়ান। ১৯০৫ সাল থেকে ভারতে রয়েছেন জেহোবা অনুগামীরা। ১০২৬ সালে প্রথম মুম্বইতে দফতর খোলে। ১৯৭৮ সালে সংগঠন হিসেবে নথিভুক্ত হয় নাম। ভারতীয় সংবিধানে যে ধর্মাচরণের স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করে, তার আওতায় সুবিধা ভোগ করেন জেহোবারা।


১৯৮৬ সালে জেহোবারা প্রথম বার খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। সেবছর সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলায় তিন পড়ুয়াকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ায় বিষয়টি আদালতে পৌঁছয়। কিন্তু ওই তিন পড়ুয়াকে নিরাপত্তা দেয় শীর্ষ আদালত। আদালত জানায়, জাতীয় সঙ্গীত গাইতে জোর করলে, সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ধর্মাচরণের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়।


বিজো ইম্যানুয়েল, বিনু এবং  বিন্দু নামের ওই তিন জন যথাক্রমে দশম, নবম এবং পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছিলেন সেই সময়। হিন্দু সংগঠন নায়ার সার্ভিস সোসাইটি পরিচালিত NSS হাইস্কুল থেকে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার জন্য ওই তিন জনকে বহিষ্কার করা হয়। আদালতে ওই তিন জনের পরিবার জানায়, জেহোবা ছাড়া আর কারও আরাধনার অনুমদোন নেই তাদের। জাতীয় সঙ্গীতও এক্ষেত্রে দেশমাতৃকার উদ্দেশে গাওয়া প্রার্থনা। উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালেও, ওই সঙ্গীত গাওয়ার অনুমতি নেই তাদের। এর পর আদালত ওই তিন জনকে রক্ষাকবচ দেয়। 


জেহোবাদের বিরুদ্ধে নানা সময় ধর্মান্তরণের অভিযোগও সামেন এসেছে। ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে মানুষকে ধর্ম পরিবর্তনে তাঁরা উদ্বুদ্ধ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতাল জানায়, নাইজিরিয়া থেকে আগত এক জেহোবা অনুগামীর লিভার প্রতিস্থাপন করেছে তারা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত বা রক্তজাত সামগ্রী যেমন ফ্রোজেন প্লাজমা, প্লেটলেট ব্য়বহার করা হয়নি। কারণ রোগীর ধর্মবিশ্বাসে তার অনুমোদন নেই। বিষয়টি সামনে আসতে বিতর্কে হয়েছিল সেই সময়।