মুম্বই: ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছিলেন। সেই মতো দলের ৯ নেতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের তোড়জোড় শুরু করলেন শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar)। ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নারওয়েকারের কাছে, ওই ৯ জনের বিধায়ক পদ (Rebel MLA) খারিজের আবেদনও জানিয়ে দিয়েছে শরদ পাওয়ারের এনসিপি (NCP)। তাঁদের তরফে জয়ন্ত পাটিল বলেন, 'আমরা বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে এর মধ্যেই প্রতিনিধি পদ খারিজের আর্জি জানিয়েছি। হার্ড কপি যত দ্রুত সম্ভব পাঠিয়ে দেব।'
আর কী?
জয়ন্ত পাটিল আরও বলেছেন, 'দল ছাড়ার আগে ওঁরা কাউকে জানাননি যা কিনা এনসিপির নীতি বিরোধী। আমরা ভারতের নির্বাচন কমিশনকেও চিঠি লিখেছি। এটা মানছি না।' তবে একই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, যে 'বিদ্রোহী' বিধায়কদের বেশিরভাগই যে ফিরে আসবেন, সে ব্যাপারে আশাবাদী শরদ পাওয়ারের দল। বিদ্রোহী বিধায়কদের নেতা তথা শরদ পাওয়ারের ভাইপো, অজিত পাওয়ারের অবশ্য দাবি, 'সমস্ত বিধায়করাই আমার সঙ্গে রয়েছেন। এখানে দল হিসেবেই যোগ দিয়েছি। আমাদের সিনিয়রদেরও জানিয়েছি। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই সম্মান পায়। আমাদের দলের বয়স ২৪ বছর। এবার তাই নবীন নেতাদের জায়গা দেওয়া উচিত।' তাৎপর্যপূর্ণভাবে ৬৩ বছরের অজিত পাওয়ার গত কাল ৮ জনকে নিয়ে বিজেপি-শিন্ডেপন্থী শিবসেনার সরকারে যোগ দেওয়ার পরই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পান। বাকি নেতাদের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভার আগামী সম্প্রসারণে জায়গা দেওয়া হবে। তবে কি ক্ষমতার জন্যই শরদ পাওয়ারের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কে এই ছেদ? অতীত বলছে, এর আগেও কাকা-ভাইপোর মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে জোরাল মতান্তর হয়েছে। ২০১৯ সালের ভোটে যেমন অজিত চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে পার্থকে মাভাল নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হোক। এই নিয়ে ঝামেলা বহু দূর গড়ায়। শেষমেশ আপস করেন শরদ পাওয়ার। কিন্তু একদা এনসিপি-র শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত মাভাল থেকে দাঁড়িয়েও হেরে গিয়েছিলেন পার্থ যা কিনা পাওয়ার বংশের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। এতেই শেষ নয়। ২০১৯ সালে, মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি-শিবসেনা আসন বণ্টন নিয়ে একমত না হতে পারায় সরকার গড়ার জন্য এনসিপি ও কংগ্রেসের দ্বারস্থ হয়। পরে শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের তরফে সম্মিলিত ভাবে উদ্ধব ঠাকরেকে 'মহা বিকাশ আগাড়ি'-র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলে হঠাৎ করে বেঁকে বসেন অজিত। হাত মেলান মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে। একেবারে গোপনে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র ৮০ ঘণ্টা স্থায়িত্ব ছিল সেই সরকারের। পরে 'মহা বিকাশ আগাড়ি'-তেই ফিরে আসেন অজিত। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সেখানকার উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
তার পর আরব সাগরের বুকে অনেক ঢেউ উঠেছে। আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছে শিবসেনা। একনাথ শিন্ডেপন্থী শিবসেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারে এসেছে বিজেপি। এবার ভাঙন এনসিপি-তে। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চোরা অসন্তোষ দানা বাঁধছিলই অজিত পাওয়ারের মনে। আর তা চরমে ওঠে যখন কাকা শরদ তাঁর মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে এবং প্রফুল্ল প্যাটেলকে দলের অস্থায়ী সভাপতি করেন। সেই সময়ই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অজিত পাওয়ার। বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ শরদ পাওয়ারের দলকে ভাঙতে প্রয়োজন ছিল 'মাহেন্দ্রক্ষণের'। লোকসভা ভোটের ঠিক আগের বছরে তাই 'মাস্টারস্ট্রোক'। কিন্তু অশীতিপর এনসিপি সুপ্রিমো এত সহজে যে হাল ছাড়বেন না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এর পর এনসিপি-র মুখ কে হবে? কথায় উত্তর না করে স্রেফ হাত তুলেছিলেন তিনি। প্রবীণ রাজনীতিবিদরা জানেন, এই হাত বহু রাজনৈতিক যজ্ঞে পৌরোহিত্য করেছে। আবারও কি কোনও খেল দেখিয়ে পাশা পাল্টে দেবেন শরদ পাওয়ার? অপেক্ষায় মহারাষ্ট্র, দেশ।
আরও পড়ুন:'ভুয়ো ব্যালট পেপার তৈরি করা হচ্ছে', বিস্ফোরক সুকান্ত