নয়াদিল্লি: মেয়েকে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন মা, সৎ বাবা। একে একে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন সকলেই। আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু যাঁর হত্যা মামলা ঘিরে একসময় উত্তাল হয়েছিল দেশ, আজও সেই শিনা বরা হত্যা মামলার কিনারা হয়নি আজও। বরং জনমন থেকে একরকম বিস্মৃত হয়ে গিয়েছেন তিনি। এত বছর পর আবারও খবরের শিরোনামে সেই শিনা। তাঁর কঙ্কালের কিছু অংশ গায়েব হয়ে গিয়েছিল আচমকাই।  সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যে জানা গেল, আচমকা যেমন হারিয়ে গিয়েছিল, আবার খুঁজেও পাওয়া গিয়েছে শিনার হাড়গোড়। এই ঘটনাক্রমকে ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। (Sheena Bora Murder)


মুম্বইয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)-এর স্টোররুম থেকে শিনার কঙ্কাল গায়েব হয়ে গিয়েছে বলে সম্প্রতি জানা যায়। গত মাসে আদালেত বিষয়টি সামনে আসে। সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, CBI-এর স্টোররুম থেকে শিনার কঙ্কাল গায়েব হয়ে গিয়েছে। সেই সময় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জেবা খানের সাক্ষ্যও নেয় আদালত। বুধবার ফের শুনানি শুরু হলে জেবা আদালতেই ছিলেন। তাঁকে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকার আগেই বিশেষ CBI বিচারক এসপি নায়েক নিম্বালকর জানান, জেবার ভাই বলে পরিচয় দিয়ে চিঠি দিয়েছেন একজন, যাতে লেখা রয়েছে, রহস্যজনক ভাবে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বেড়ে গিয়েছে জেবার। বিদেশে সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়েই জেবার এত প্রতিপত্তি বলেও চিঠিতে লেখা রয়েছে, জানান CBI বিচারক। শিনার কঙ্কালের অংশ গায়েব হওয়ার পিছনেও জেবার হাত রয়েছে বলেও নাকি অভিযোগ তোলা হয় চিঠিতে। (Sheena Bora Case)


CBI বিচারক জানান, এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। সেই সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন শিনার মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী রঞ্জিত সাঙ্গলে, পিটার মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী মঞ্জুলা রাও এবং সঞ্জীব খন্নার আইনজীবী শ্রেয়াংশ মিঠারে। তাঁরাও তদন্তে সায় জানান। এর পর আদালতের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন সরকারি কৌঁসুলি। বেশ খানিক ক্ষণ পর ফিরে এসে জানান, CBI-এর স্টোররুমে শিনার কঙ্কালের অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেটিকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতে চান না গোয়েন্দারা। যদিও জেবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি তিনি। এর পর অভিযুক্তদের আইনজীবীরা শিনার কঙ্কালের ওই অংশগুলি আদালতে পেশ করার দাবি দানান। কিন্তু বিচারক জানান, CBI যেখানে প্রমাণ হিসেবেই ধরছে না সেগুলিকে, তাই তার প্রয়োজন নেই। যদিও আচমকা শিনার কঙ্কালের অংশ গায়েব হয়ে যাওয়া এবং হঠাৎ তা খুঁজে পাওয়ার এই ঘটনাক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।


আরও পড়ুন: Andhra Pradesh Minor Gang Rape: খেলার নাম করে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে গণধর্ষণ, খুন করে ফেলে দেওয়া হল খালে, অভিযুক্ত তিন নাবালক


INX Media-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রাণীর মেয়ে শিনা। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান শিনা। সেই মামলায় ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে ইন্দ্রাণী গ্রেফতার হন। একে একে গ্রেফতার হন ইন্দ্রাণীর গাড়ির চালক শ্যামবর রাই, ইন্দ্রাণীর দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী সঞ্জীব এবং তৃতীয় পক্ষের স্বামী, ব্যবসায়ী পিটার।  গাড়িতে শ্বাসরোধ করে শিনাকে খুন করা হয় এবং পরে জঙ্গলে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে উঠে আসে। জঙ্গল থেকে পুড়ে যাওয়া দেহাংশও উদ্ধার হয়। তদন্তকারীরা জানান, জেরায় অপরাধ শিকার করে নেন শ্যামবর এবং সঞ্জীব। যদিও ইন্দ্রাণী এবং পিটারের দাবি ছিল, শিনা বেঁচে রয়েছেন, লুকিয়ে রয়েছেন।


সেই নিয়ে একসময় উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ।  শিনা সম্পর্কে ইন্দ্রাণীর বোন বলেই জানতেন সকলে। পরে জানা যায়, আসল তথ্য গোপন করে রেখেছিলেন ইন্দ্রাণী। শিনা আসলে তাঁর মেয়ে। ইন্দ্রাণীর ছেলে মিখাইল সেই তথ্য ফাঁস করেন। পিটারের প্রথম পক্ষের ছেলে রাহুলের সঙ্গে শিনার সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই ইন্দ্রাণী মেয়েকে খুনের ছক কষেন বলে সামনে আসে। নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত মামলার সুরাহা হয়নি। দোষী সাব্যস্তও হননি কেউ, শিনা আদৌ বেঁচে রয়েছেন কি না, তাও জানা যায়নি। বরং একে একে ইন্দ্রাণী, পিটাররা জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ইন্দ্রাণী এখনও দাবি করছেন যে, শিনা বেঁচে রয়েছেন। শিনা তাঁর সন্তান মেনেছেন ইন্দ্রাণী। তবে তাঁর দাবি, অল্প বয়সে বাবার লালসার শিকার হন তিনি। শিনা আসলে তাঁর বাবার সন্তান। এত কিছুর মধ্যেও শিনা বরা মামলার রহস্যের উদঘাটন হয়নি আজও।