নয়াদিল্লি: দেশ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। দিল্লির নিরাপদ আশ্রয় থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশে কি আর কখনও ফেরা হবে শেখ হাসিনার। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে নিজেই সেই নিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। (Sheikh Hasina)
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরই সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার জেরে হাসিনার দল আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যে কারণে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও করেছে তারা। আর সেই আবহেই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন হাসিনা। (Sheikh Hasina on Returning to Bangladesh)
ছাত্র আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হওয়ার পর বাংলাদেশে যখন আগুন জ্বলছে, সেই সময় কার্যত প্রাণ হাতে করে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। সেই থেকে ভারতেই রয়েছেন তিনি। মাঝে শোনা গিয়েছিল, ব্রিটেন বা অন্য কোনও দেশে নির্বাসন কাটাবেন তিনি। কিন্তু আপাতত ভারত ছাড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানালেন হাসিনা। কিন্তু বাংলাদেশে ফেরার কি কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? ৭৮ বছর বয়সি হাসিনা জানালেন, নির্বাচনে তাঁর দলকে ব্রাত্য রেখে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, সেই বাংলাদেশে ফিরবেন না তিনি।
নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে, তারা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেই নির্বাচনে আওয়ামি লিগ অংশ নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হাসিনা। তাঁর বক্তব্য, ‘আওয়ামি লিগের উপর এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তিযুক্তি নয়। এটি একধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। পরবর্তী সরকারের নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ,যাঁরা আওয়ামি লিগকে সমর্থন করেন, তাঁরা ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার রাজনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব নয়’।
চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামি লিগের নথিভুক্তিকরণ বাতিল করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা জানিয়ে, যুদ্ধাপরাধের তদন্তকে সামনে রেখে আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে ইউনূস সরকার। কিন্তু এখনও আশা ছাড়তে নারাজ হাসিনা। তাঁর বক্তব্য, 'আওয়ামি লিগের ভোটারদের অন্য কোনও দলকে সমর্থন জানাতে বলছি না আমরা। আমরা আশাবাদী, সুবুদ্ধি ফিরবে ওদের। আমাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে'। ঘুরপথে তিনি বা কেউ সেই নিয়ে চেষ্টা চরিত্র করছেন কি না, তা যদিও খোলসা করেননি হাসিনা।
গণ আন্দোলনের পর যেভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় তাঁকে এবং পরবর্তীতে দেশের পরিস্থিতি যেদিকে এগিয়েছে, তা নিয়ে বারং বার ইউনূস সরকারের সমালোচনা করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশে লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, গত বছর ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও রয়েছে। সেই নিয়ে বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, গুমখুন, আয়নাঘরে অত্যাচারের ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এসেছে।
আগামী ১৩ নভেম্বর সেই মামলায় রায় আসতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামি লিগের ভবিষ্যৎ কী? হাসিনার ছেলে, আমেরিকা নিবাসী সজীব ওয়াজেদ দলকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী। কিন্তু হাসিনার বক্তব্য, 'আমি বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ফিরলেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে। কোনও ব্যক্তি বা পরিবারের উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না'।
কয়েক মাস আগে দিল্লির লোধি গার্ডেনে হাঁটতে দেখা যায় হাসিনাকে। সঙ্গে ছিলেন দুই নিরাপত্তারক্ষী। আশেপাশের লোকজন চিনতে পারলে, হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া জানাতেও দেখা যায় তাঁকে। তাহলে কি দিল্লিতেই পাকাপাকি থেকে যাওয়ার কথা ভাবছেন হাসিনা? বাংলাদেশে ফিরতে কতটা আগ্রহী তিনি? হাসিনার বক্তব্য, ‘বৈধ সরকার গঠিত হলে, সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা হলে এবং আইনের শাসন ফিরলে অবশ্যই বাড়ি ফিরতে আগ্রহী আমি’। কিন্তু আওয়ামি লিগের উপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা, তাঁকে নিয়ে জমে থাকা ক্ষোভ, কি তাঁকে ফিরতে দেবে? সন্দিহান হাসিনার অনুগামীরাই। ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে বাবা শেখ মুজিবুর রহমান, তিন ভাইকে হারান হাসিনা। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বোন রেহানা এবং তিনি। তাই বাংলাদেশে হাসিনার ফেরা একরকম অনিশ্চিতই। হাসিনা জানিয়েছেন, দিল্লিতে যথেষ্ট স্বাধীনতাই রয়েছে তাঁরা। স্বাধীন ভাবেই বসবাস করছেন। তবে তাঁর পরিবারের উপর হিংসা নেমে আসার যে ইতিহাস, তা মাথায় রেখে সতর্ক থাকতে হয় সর্বদা।