সুলতানপুর: রাস্তার ধারে গুমটি দোকান। এক কোণে বসে ছেঁড়া চটি-জুতো সারাতেন তিনি। পথচলতি মানুষজন কখনও সখনও জুতো ঘষেমেজে নিতেও আসতেন। কাজ হয়ে গেলে টাকা দেওয়া ছাড়া মুখের দিকেও এতকাল ভাল করে তাকাতেন না কেউ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের বাসিন্দা রাম চেত এখন সেলিব্রিটি হয়ে গিয়েছেন। দিন কয়েক আগে তাঁর দোকানে ঢুঁ মারতে এসে জুতো সেলাই করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। আর তাতেই জীবন পাল্টে গিয়েছে রামের। (Rahul Gandhi)
সুলতানপুর আদালতে একটি মানহানি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে সম্প্রতি সেখানে পৌঁছন রাহুল। রাস্তার ধারে জুতো সারাইয়ের গুমটিটি দেখে এগিয়ে যান। দৈনিক কত রোজগার রামের, জুতো সারাই শিখলেন কার কাছ থেকে, সংসারে কে কে আছে, সেই খবরও নেন রাহুল। কথার ফাঁকে একটি চটি নিজের হাতে সেলাইও করেন তিনি। সেখান থেকে চলে গেলেও, পরে রামকে একটি সেলাই মেশিনও পাঠান। এতে জুতো সেলাইয়ের কাজ আরও সহজ হয়ে উঠেছে রামের। (Rahul Gandhi Meets Cobbler)
কিন্তু গুমটিতে রাহুল পা রাখার পর থেকেই বদলি গিয়েছে রামের চারপাশ। দলে দলে মানুষজন তাঁর গুমটির সামনে এসে ভিড় করেন, সেলফই তোলার আবদার করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মোটর সাইকেল, গাড়ি থামিয়েও লোকজন ছুটে আসেন, রাস্তা থেকে তাঁর নাম ধরে হাঁকেন। রাহুলের জন্য সমাজে তাঁর সম্মান বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাম।
আরও পড়ুন: Viral News: মোবাইল-টিভি দেখতে বাধা, মা-বাবার বিরুদ্ধে থানায় ছেলেমেয়ে, মামলা উঠল আদালতে
শুধু তাই নয়, তাঁর গুমটিতে বসে রাহুল যে চটিটি সেলাই করেছিলেন, সেটি কিনতে অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন রাম। মুখোমুখি তো বটেই, ফোনেও লোকজন রাহুলের সেলাই করা চটির মোটা টাকা দাম ধরাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। রাম জানিয়েছেন, ফোনে একজন ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চটিটি কিনতে চান। তিনি রাজি না হলে, দাম আরও চড়তে থাকে। একজন রাহুলের সেলাই করা চটির বিনিময়ে ব্যাগভর্তি টাকাও দিতে চান বলে জানিয়েছেন রাম।
কিন্তু যত টাকাই দেওয়া হোক না কেন, রাহুলের সেলাই করা চটিটি তিনি কোনও মতেই বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন রাম। কেন জিজ্ঞেস করলে রসিকতার সুরে বলেন, "রাহুল গাঁধী আমার পার্টনার। পার্টনারশিপে দোকান চালাচ্ছি আমরা।" যে ব্যক্তি চটিটি সেলাই করতে দিয়েছিলেন, তাঁকেও আর সেটি ফেরত দেবেন না, পরিবর্তে দাম মিটিয়ে দেবেন বলে জানান।
রাম জানিয়েছেন, কী করে জুতো জেলাই করতে হয়, পেস্ট করতে হয়, রাহুল তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি দেখানোর পর নিজেই একটি চটি তুলে নিয়ে সেই কাজ করেন রাহুল। গুমটি চালিয়ে অস্থায়ী কুঁড়েঘরেই থাকেন রাম। বিদ্যুৎ নেই তাঁর ঘরে। কিন্তু রাহুলের সঙ্গে ছবি সামনে আসার পর থেকে পুলিশ-প্রশাসনও তাঁর কুঁড়ের সামনে ঘোরাঘুরি শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রাম। আগে কখনও চেয়ে না দেখলেও, এখন সবাই সমস্যা, চাহিদার কথা জানতে চাইছেন বলে দাবি রামের।
কুঁড়েঘরে বিদ্যুৎ নেই। রাহুলের পাঠানো মেশিনে সেলাই করবেন কী করে রাম? তিনি জানান, ছেলে যেখানে থাকে, সেখানে বিদ্যুৎ রয়েছে। মেশিন সেখানেি রেখে আসেন তিনি। সেখানেই সেলাইয়ের কাজ সারেন। রামের ছেলে রঘুরাম জানিয়েছেন, রাহুল তাঁর সঙ্গেও কথা বলেন। সম্মান নেই বলেই তিনি বাবার মতো জুতো সেলাই করেন না, দিনমজুরের কাজ করেন বলে জানিয়েছেন রঘুরাম।