ইম্ফল: জ্বলছে মণিপুর (Manipur)। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের (Central Government)। এর মধ্যেই অনলাইনে দু'টি বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের (N Biren Singh( সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। এমনকি পড়শি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও একপ্রস্ত কথাবার্তা সেরে রেখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 


কী পরিস্থিতি?
গত বুধবার থেকে অশান্ত উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। হিংসা নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। কিন্তু তাদের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে ভুয়ো ভিডিও। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে এই নিয়ে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়। জানানো হয়, 'শত্রুভাবাপন্ন একাংশের তরফে' এই ধরনের ভুয়ো ভিডিও ভেবেচিন্তে ছড়ানো হচ্ছে। 'অসম রাইফেলস'-র উপর হামলা-সহ একাধিক এমন ভিডিও রয়েছে সেই তালিকায়। ভারতীয় সেনার তরফে মণিপুরের বাসিন্দাদের কাছে আর্জি জানানো হয়, একমাত্র সরকারি এবং নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে পাওয়া তথ্য এবং ভিডিওতেই তাঁরা যেন বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে মণিপুর পুলিশের দাবি, মায়ানমার থেকে যে অনুপ্রবেশকারীরা উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ঢুকে পড়েছিল, তারাই সমস্ত হিংসার মূল চক্রী। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে গত বুধবার থেকে টানা পাঁচদিন চুড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ওই দিন থেকেই নতুন করে উত্তাপ ছড়ায় মণিপুরের একাংশে। 


কেন অশান্তি?


মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত করার দাবিকে ঘিরেই অশান্তির সূত্রপাত (ST Reservation)। ছাত্র সংগঠন All Tribal Students' Union of Manipur (ATSUM)-এর 'উপজাতি সংহতি মিছিল' ছিল বুধবার। মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতেই মিছিল বার করা হয়। গত মাসে এই মর্মে রায় শোনায় মণিপুর হাইকোর্টও। তাকে ঘিরে ক্রমশ তেতে উঠছিল পরিস্থিতি। সংঘাত পরিস্থিত তৈরি হয় উপত্যকার ভবঘুরে মেইতেই সম্প্রদায় এবং রাজ্যের পাহাড়ি এলাকার উপজাতিদের মধ্যে। বুধবার এই সংহতি মিছিলকে ঘিরেই অশান্তি বাধে।


যে কারণে তফসিলি উপজাতি হিসেবে সংরক্ষণ চাইছেন মেইতিরা


কিন্তু অশান্তির নেপথ্য কারণ জানার আগে, মেইতেইরা কেন তফসিলি উপজাতি আইনে সংরক্ষণ চাইছেন, তা জানা প্রয়োজন। ২০১২ সাল থেকে তফসিলি উপজাতি হিসেবে সংরক্ষণ চেয়ে সরব মেইতিরা। মণিপুর তফসিলি উপজাতি দাবি কমিটি-র তরফে সেই দাবি জোরাল করা হয়। হাইকোর্টে সেই মর্মে আবেদন জমা দেয় মেইতেই ট্রাইব ইউনিয়ন। কেন্দ্রীয় তফসিলি উপজাতি সংক্রান্ত মন্ত্রকের কাছে বিষয়টি সুপারিশ করার আর্জি জানানো  হয়। তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সংবিধান মেনে মেইতেইদের উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।  মেইতেইদের দাবি, ১৯৪৯ সালে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মণিপুর সংযুক্ত হওয়ার আগে তাঁরা উপজাতি হিসেবেই গন্য় হতেন। কিন্তু সংযুক্তিকরণের পর উপজাতি পরিচয় হারান তাঁরা। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষাও আজ হারাতে বসেছেন তাঁরা। সাংবিধানিক কোনও রক্ষাকবচও নেই। যে কারণে আজ নিজভূমেই কোণঠাসা তাঁরা। ১৯৫২ সালে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাং যেখানে মেইতেই ছিল, ২০১১ সালের আদমসুমারিতে তা ৪৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকে।  তাই অবিলম্বে মেইতেইদের সংরক্ষণের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় আদালতে। মেইতেইদের এই আবেদনে সাড়া দেয় হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় সরকারকে। 


মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি ঘোষণার বিরোধিতা হচ্ছে যে কারণে


কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরও, মেইতেইদের সংরক্ষণের আওতায় আনায় তীব্র আপত্তি মণিপুরের তফসিলি উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত সম্প্রদায়ের। তাদের যুক্তি, জনসংখ্যার নিরিখে তো বটেই, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের নিরিখেও মেইতেইরা আধিপত্য রয়েছে রাজ্যে। রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টিই মেইতেই অধ্যুষিত উপত্যকার মধ্য়ে পড়ে। তাই মেইতেইদের সংরক্ষণ দিলে, কর্মক্ষেত্রেও তাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে দাবি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মাপকাঠির নিরিখে এগিয়ে থাকা মৈইতেইদের জন্য বাকিদের বঞ্চিত হতে হবে বলে মত কুকি উপজাতি সম্প্রদায়ের সংগঠন 'কুকি ইনপি মণিপুরে'র প্রধান জনঘুলুন হাওকিপের।



আরও পড়ুন:অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর পর তা যেন আর ফিরে না আসে, নিজের খেয়াল রাখুন নিয়ম মেনে