১৯ ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগ দেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বাবা শিশির অধিকারী এবং সেজ ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সাংসদ। তাঁরাও কি বাড়ির মেজছেলের পথে হাঁটবেন? এই জল্পনার মধ্যেই দু’দিন আগে খড়দায় বিজেপির সভামঞ্চ থেকে চাঞ্চল্যকর দাবি করেন শুভেন্দু। বাড়ির বাকি সদস্যদের নিয়েও জল্পনা উস্কে দেন তিনি। নাম না করে তিনি আগে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে নিশানা করে ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগান দিয়েছিলেন, খড়দার সভায় তাঁকেই বিদ্রুপ করে বলেন, বাবুসোনা, এখন তো সবে কুঁড়ি ফুটেছে। রামনবমী বাসন্তী পুজো আসতে দিন। আমার বাড়িতেও পদ্ম ফুটবে! প্রশাসক পদ থেকে ভাইকে অপসারণ করার বিষয়টি ভালভাবে নেননি দিব্যেন্দু অধিকারীও। গত ২৯ তারিখ তমলুকে তিনি বলেন, আমি কাল থেকে আর কাঁথি পুরসভায় বসব না, এটা নিন্দনীয় ঘটনা, এটা ঠিক কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না।
এই প্রেক্ষাপটেই কাঁথি পুরসভার প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সৌমেন্দ্যুকে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলা করলেন অধিকারী পরিবারের ছোট ছেলে। ৪ জানুয়ারি মামলার শুনানি হবে। সৌম্যেন্দুর আইনজীবী বিল্লদল ভট্টাচার্য জানান, নিয়ম মেনে অপসারণ হয়নি, এই জন্য মামলা। আদালত সব পক্ষকে কপি পাঠাতে বলেছে। সৌমেন্দুর অপসারণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অপসারণের পিছনে উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে অভিমত জানিয়েছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
তৃণমূল এই অভিযোগ না মানলেও, কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সৌমেন্দ্যুকে সরিয়ে সিদ্ধার্থ মাইতিকে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদে বসানো নিয়ে কটাক্ষ করেন বাসি মেয়র! তৃণমূলের খুব খারাপ দিন চলছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়েও চলে একপ্রস্ত নাটক। এদিন দুপুর দেড়টায় কাঁথি পুরসভায় পৌঁছে যান নতুন প্রশাসক। কিন্তু দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন কাঁথি পুরসভার ধারে কাছে ছিলেন না প্রাক্তন প্রশাসক সৌম্যেন্দু। ফলে দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের কর্মীরা। দুপুর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত চলে এই টালবাহানা। অবশেষে কাঁথির মহকুমাশাসকের নির্দেশে দায়িত্বগ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। বলেন, দীর্ঘক্ষণ টালবাহানার পর দায়িত্বভার নিলাম। প্রথম লক্ষ্য মানুষকে পরিষেবা দেওয়া। কেউ যদি মনে করেন ৫ দিন ছুটিতে থাকবেন, তাহলে তো পুরসভার কাজ বন্ধ থাকে না।
বুধবার আবার কাঁথিতে অধিকারী পরিবারের বাড়ি শান্তিকুঞ্জে যান পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। এমনকি শিশির অধিকারীও তাঁর সঙ্গে চা খেয়েছেন, কথা হয়েছে, জ্যোতির্ময়বাবু একথা বলার পর থেকে জল্পনা আরও জোরাল হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শান্তিকুঞ্জে এখনও পদ্ম ফোটেনি। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে তা বিগত কয়েকদিনের ঘটনাতেই স্পষ্ট।
অন্যদিকে মে মাসে কাঁথি পুরসভার মেয়াদ শেষের পর যখন সৌম্যেন্দুকে প্রশাসক পদে বসানো হয়েছিল, তার বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন এক সিপিএম কর্মী। এর মধ্যে ফের প্রশাসক বদল হওয়ায়, আদালতে তা খারিজ করার আর্জি জানান তিনি। কিন্তু গেজেট নোটিফিকেশন জারি না হওয়ায়, মামলাকারীর সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
এখন সবার নজর চার তারিখের শুনানির দিকেই।