কলকাতা: করোনা এবার কেড়ে নিল বাঙালির সৌমিত্রকেও!


করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬ অক্টোবর বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তারপর শরীর কখনও কখনও একটু ভাল হয়েছে, আবার কখনও খবর এসেছে, ভাল নেই তিনি। তবু বাঙালি আশা করেছিল, হীরক রাজ্যের অত্যাচারী রাজাকে যেভাবে হার মানিয়েছিলেন, সেভাবেই শেষ লড়াইটা এবারেও জিতে যাবেন উদয়ন পণ্ডিত। কিন্তু বাস্তব কি সিনেমার প্লট মেনে চলে?

দেখে নেওয়া যাক গত ৪০ দিনে সৌমিত্রের জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ের কিছু মুহূর্ত-

১০ অক্টোবর- তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, রয়েছেন আইটিইউ-তেঅক্সিজেন সাপোর্টে। ওষুধ ছাড়াই স্বাভাবিক আছে রক্তচাপ। আছে তন্দ্রাচ্ছন্নভাব। বেলভিউ হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্ষীয়াণ অভিনেতার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। ওঠানামা করছে রক্তচাপ।

১১ অক্টোবর- হল প্লাজমা থেরাপি। হাসপাতাল জানাল, ভাল আছেন সৌমিত্র। করোনা জনিত অস্বস্তি কমেছে। তাঁর মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। অক্সিজেন সাপোর্ট সিস্টেমে থাকলেও কমানো হয়েছে তার মাত্রা।

১২ অক্টোবর- বর্ষীয়াণ অভিনেতার শারীরিক অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। তবে আগের থেকে আর অবনতি হয়নি, স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। তবে জ্বর এসেছে নতুন করে।

১৪ অক্টোবর- করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ। চিকিৎসকদের কথায় সাড়া দিচ্ছেন, চোখ খুলছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আর জ্বর আসেনি। ফুসফুসে কোভিড সংক্রমণ আর বাড়েনি। মূত্রনালিতে সংক্রমণও কিছুটা ঠেকানো গেছে। চিকিৎসকদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে।

১৫ অক্টোবর- করোনামুক্ত সৌমিত্র। দ্বিতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে গতকালই। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যা কাটাতে দেওয়া হচ্ছে মিউজিক থেরাপি।

১৬ অক্টোবর- রাতে ভাল ঘুমিয়েছেন। র অস্থিরতা আরও কমেছে। শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা যথাযথ। চলছে মিউজিক থেরাপি। মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত ও পছন্দের গান শোনানো হচ্ছে বর্ষীয়াণ অভিনেতাকে।

১৯ অক্টোবর- কেমন আছেন সৌমিত্র? নানাবতী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের মাধ্যমে ফোনে খবর নিলেন অমিতাভ বচ্চন।

২৫ অক্টোবর- এক সপ্তাহ আগেও ভাল ছিলেন একটু। কিন্তু ফের সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি। উন্নতি হয়নি মস্তিষ্কের  স্নায়ু সমস্যার, ফিজিওথেরাপির পরেও বসতে পারছেন না। ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন। ফের প্লাজমা থেরাপি করা হতে পারে তাঁর।

২৬ অক্টোবর- আরও সঙ্কটজনক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রয়েছেন এন্ডোট্র্যাকিয়াল ইনটিউবেশনে। ফুসফুসে নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ রোখার জন্য এই ব্যবস্থা। স্বাভাবিকের চেয়ে শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি রয়েছে তাঁর। কমছে প্লেটলেট, তাই অন্ত্রে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা চিকিৎসকদের। ক্রমশ বাড়ছে স্নায়ুর সমস্যা।


২৭ অক্টোবর- অবস্থা আরও সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশনে সৌমিত্র। স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না কিডনি। রাখা হয়েছে ৪০ শতাংশ অক্সিজেন সাপোর্টে। ফুসফুসে নতুন সংক্রমণের আশঙ্কা। তবে নিয়ন্ত্রণে অন্ত্রের রক্তক্ষরণ।

২৯ অক্টোবর- অবস্থার নতুন করে অবনতি হয়নি। চোখ মেলছেন, দেওয়া হয়েছে রক্ত। ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত আছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম, দুই ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে।

৩০ অক্টোবর- শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। দু’দফায় ডায়ালিসিসের পর তাঁর কিডনির অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। রেচন প্রক্রিয়া আগের থেকে ভাল। উন্নতি হয়েছে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার।

১ নভেম্বর- শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাঝে থামলেও রাতের দিকে ফের হয় রক্তক্ষরণ। যা থামাতে চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে করান সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম।

১৩ নভেম্বর- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি। আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফের করা হয়েছে ডায়ালিসিস। আগামীকাল হবে প্লাজমাফেরেসিস।

১৪ নভেম্বর- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি। দ্রুত বেড়েছে মস্তিষ্কে স্নায়ুর সমস্যা। প্রবলভাবে বেড়েছে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা। অবনতি কিডনির কার্যকারিতার। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের থেকে বেশি। সব থেকে বেশি অবনতি হয়েছে স্নায়ুর সমস্যার। আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৫ নভেম্বর (সকাল ৭.৩২)- শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি অব্যাহত। কোনও চিকিত্‍সাতেই সাড়া দিচ্ছেন না প্রবাদপ্রতিম এই অভিনেতা। রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ সহ সমস্ত অঙ্গকে সচল রাখতে যা যা করা হচ্ছে, তাতেও শারীরিক অবস্থারাখা হয়েছে সৌমিত্রবাবুকে ১০০ শতাংশ ভেন্টিলেশনে। তাতেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা খুব একটা বাড়ানো যাচ্ছে না।

১৫ নভেম্বর (বেলা ১২.২২)- বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন সৌমিত্র।