নয়াদিল্লি: জনসংখ্যায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনায় ছুটি ঘোষণা করেছিল চিনের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কম বয়সি ছেলেমেয়েদের প্রেমে পড়তে, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতেই এমন পদক্ষেপ করা হয়। চিনের থেকে এক কদম এগিয়ে দেশের তরুণ নাগরিকদের নিঃসঙ্গতা কাটানোয় সাহায্য করতে এগিয়ে এল দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার (South Korea News)। নিঃসঙ্গদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে অর্থসাহায্য় করতেও প্রস্তুত সে দেশের সরকার (Loneliness)।


মানুষ আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বলে সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়ে


কর্মব্যস্ত জীবন তো বটেই, কোভিড অতিমারির প্রভাবে মানুষ আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বলে সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়ে। দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ লক্ষের বেশি তরুণ নাগরিক নিঃসঙ্গ অবস্থায়, একাকী জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে, সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে, মেলামেশার সুযোগ করে দিতে মাসে আর্থিক ভাতাও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে স্বাভাবিকতায় ফিরতে দেশের তরুণদের প্রায় ৫০০ ডলার মাসিক ভাতা দিচ্ছে সে দেশের সরকার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪১ হাজার টাকা।


শুধুমাত্র নিঃসঙ্গতা কাটানোর ভাতাই নয়, তরুণ নাগরিকদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষাখাতেও অতিরিক্ত সাহায্য় প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। তার জন্য ইতিমধ্যেই সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। নাগরিকদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আবেদন জানাচ্ছে দেশের সরকার। প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে সরকারের তরফে।


আরও পড়ুন: ISIS: ছত্রাকের খোঁজে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৩১ জন, রাখাল ছেলেদেরও নিস্তার নেই, সিরিয়ায় ফের সক্রিয় ISIS


দক্ষিণ কোরিয়ার ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ১৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার হয় নিঃসঙ্গ অথবা একাকীত্বে ভুগছেন, যা ওই বয়সি মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ। এই আচরণকে ‘হিকিকোমোরি’ বলে উল্লেখ করছেন কোরীয় বিশেষজ্ঞরা, জাপানি শব্দ এটি, যার অর্থ সমাজ সংসার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। তাই স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনতেই সরকারের তরফে সক্রিয়তা শুরু হয়েছে।


তবে শুধুমাত্র ১৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সিদের জন্যই নয়, ৯ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের থাকার খরচও বহন করতে রাজি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। কিশোর-কিশোরীদেরও সমাজ-সংস্কৃতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য মাসিক ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের একটি নথিতে বলা হয়েছে, দরিদ্র পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েরা ভাগ্য ফেরাতে এলেও, শহুরে জীবন যাপনে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। আবার পারিবারিক অশান্তি, মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার থেকে নিস্তার পেতেও নিভৃত জীবন বেছে নেন অনেকে। ১৫ বছর বয়স থেকেই একা থাকতে শুরু করে কিশোর কিশোরীদের একাংশ।


দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার ০.৭৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে


এর প্রভাব দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার উপরও পড়ছে বলে মনে করছে কোরিয়া সরকার। কারণ গত মাসেই দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল জানান, জন্মহার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার ০.৭৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়াই একমাত্র দেশ, যাদের জন্মহার ১ শতাংশেরও নিচে। অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, জীবনযাপন আরও মহার্ঘ হওয়াতেই মেয়েদের মধ্যে সন্তানধারণে অনিচ্ছা তৈরি হয়েছে বলে উঠে এসেছে একাধিক সমীক্ষায়।