সোল: পর পর বিমান দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এবার দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও মারাত্মক ঘটনা ঘটল। যুদ্ধবিমান থেকে বোমা গিয়ে পড়ল লোকালয়ে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল চারিদিক। আগুনের লেলিহান শিখা ও কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল এলাকা। সিসি ক্যামেরা সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে, যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ভুলবশতই বসতি এলাকায় বোমাগুলি ফেলা হয় বলে জানা যাচ্ছে। (South Korea Accidental Bomb Drops)
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার পোচানের আকাশে বায়ুসেনার মহড়া চলছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পোচান। উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা বলে সেখানে প্রচুর সংখ্যক সেনা মোতায়েন থাকে সারা বছর। বৃহস্পতিবার সেখানেই বায়ুসেনার মহড়া চলছিল। জানা গিয়েছে, KF-16 যুদ্ধবিমান নিয়ে যৌথ মহড়া চালাচ্ছিল বায়ুসেনা। যুদ্ধবিমানগুলিতে ২২৫ কেজি Mk82 বোমা ছিল। (Bombs in Civilian Area)
কিন্তু সেই মহড়া চলাকালীনই বিপত্তি বাধে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যুদ্ধবিমানগুলি থেকে পর পর আটটি বোমা বসতি এলাকায় পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, রোদ ঝলমলে নিঝুম পাড়া দিয়ে একটি গাড়ি সবে বেরোতে যাচ্ছিল। সেই সময়ই জোরে মাটিতে আছড়ে পড়ে কিছু। আর সঙ্গে সঙ্গে তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারিদিক। আগুনের লেলিহান শিখা, ধোঁয়ার কুণ্ডলীও চোখে পড়ে।
পর পর বোমা আছড়ে পড়ায় এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। বোমাটি আছড়ে পড়ার সময় গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছিলেন ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, "আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। জ্ঞান ফিরল যখন, দেখি অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে।" এলাকায় অবস্থিত একটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোমার আঘাতে। গির্জাটির ছাদ উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বায়ুসেনা। বিবৃতিতে বলা হয়, ''আমাদের KF-16 যুদ্ধবিমান থেকে অস্বাভাবিক ভাবে MK-82 বোমার আটটি শেল আছড়ে পড়ে মাটিতে। মহড়ার জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে পড়ে বোমাগুলি। ক্ষয়ক্ষতির জন্য আমরা দুঃখিত। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি'। একটি যুদ্ধবিমানের পাইলট ভুল কোঅর্ডিনেটস দেওয়াতেই এই ঘটনা ঘটে বলে জানানো হয়। এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। একটি বিমান থেকে বোমা আছড়ে পড়ার, অন্য বিমানগুলিকে কেন নিয়ন্ত্রণ করা গেল না, উঠছে প্রশ্ন। আপাতত বায়ুসেনার মহড়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পর এলাকা খালি করে দেওয়া হয় দ্রুত। আর কোনও বোমা এলাকায় রয়েছে কি না, তা দেখতে চলে তল্লাশি। আমেরিকার বাহিনীর সঙ্গে এই মহড়া চলছিল আজ। ১০ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার মহড়া চালানোর কথা ছিল তাদের। কিন্তু এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদেরই রোষে পড়তে হচ্ছে বায়ুসেনাকে। বসতি এলাকার কাছে আকাশে মহড়া চালানো নিয়ে বহু বছর ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁদের আপত্তি খাটেনি। এদিনের ঘটনায় তাই ফুঁসছেন সকলে।
এর আগে, ২০২২ সালেও দক্ষিণ কোরিয়া এবং আমেরিকার বায়ুসেনার যৌথ মহড়া চলাকালীন বিপত্তি বাধএ। সেবার স্বল্প দূরত্বের একটি ব্য়ালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে আচমকা সমস্যা দেখা দেয় এবং সেটি সেনা শিবিরের গল্ফ মাঠে আছড়ে পড়ে। ওয়ারহেডটিতে সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ না ঘটলেও, আগুনের লেলিহান শিখা, ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এলাকা।