কলকাতা: শেষ পর্যন্ত বিজেপির হয়ে মাঠে  নামছেন  শোভন-বৈশাখী। গত সোমবার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের  নেতৃত্বে কলকাতায় বিশাল বাইক মিছিলের আয়োজন করেছিল বিজেপি। কিন্তু  শেষ পর্যন্ত দিনভর দফায় দফায় নাটকের পর গেরুয়া শিবিরের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে শেষ অবধি মিছিলে হাজিরই হননি তিনি ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনভর শোভনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু আবারও মানভঞ্জন হয়নি তাঁর।  স্বয়ং বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ খুলে বলেন, ওঁরা বিজেপির সুরে সুর মেলাতে পারছেন না। অবশেষে তিন বছর পর রাস্তায় নামছেন তাঁরা।


বিজেপি সূত্রে খবর, সংগঠনের দক্ষিণ কলকাতা শাখার উদ্যোগে সোমবার বৈশাখীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সেই উপলক্ষ্যে মিছিল। পুলিশের অনুমতি চেয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠি। শোভন বৈশাখীর হাজিরার সম্মতি মিলেছে। তিনি বলেছেন, ওরা সংবর্ধনা দেবে, আমরা দুজন থাকব।

অবশেষে শুক্রবার জানা গেল, সোমবার গোলপার্ক থেকে সেলিমপুর পর্যন্ত বিজেপি  মিছিল করবে। তাতে যোগ দেবেন দুজনে। এর আগে বৈশাখী সোমবার অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে শারীরিক অসুস্থতার উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন, আমার পা ফোলা ছিল, তাই যেতে পারিনি। আমাকে দেখার জন্য শোভন ছাড়া আর কেউ ছিল না, তাই শোভনও যাননি। আমরা বিজেপিতে সব ধরণের দায়িত্ব পালন করব। আজ তিনি জানান, শরীর ঠিক হয়েছে। আমরা মিছিলে থাকব।

এক বছরের বেশি শোভন-বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও তাঁদের অবস্থান নিয়ে নানা ঘটনাবলীতে সংশয়, জল্পনা, প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর ১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগ দেন শোভন-বৈশাখী। তারপর রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শোভনকে ডাকা হলেও, ব্রাত্য ছিলেন বৈশাখী। যদিও বিজেপি  রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁদের ব্যাপারে ডাল, ভাতের অনুষঙ্গ টেনেছিলেন।এরই মধ্যে কখনও ভাইফোঁটার দিন কালীঘাটে পৌঁছে যান শোভন-বৈশাখী! আবার  রাজ্য সরকারের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও বিশেষ অতিথির আসনে দেখা যায় দু’জনকে।

প্রশ্ন ওঠে , তাহলে কি পুরনো ঘরে ফিরতে চলেছেন শোভন! এরই মধ্যে শোভন-বৈশাখীর মানভঞ্জের চেষ্টায় উদ্যোগী হয় বিজেপি নেতৃত্ব! কিন্তু, বছর ঘুরে গেলেও আজ পর্যন্ত দু’জনকে বিজেপির কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি! সম্প্রতি অমিত শাহের রাজ্য সফরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শোভন-বৈশাখী! এরপরই ভোটের আগে শোভনকে মাঠে নামাতে তাঁকে কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক করে বিজেপি। বৈশাখীকে সহ আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কিন্তু ফের নাটকীয়ভাবে সোমবার নিজেদের বিজেপির কর্মসূচি থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত শোভন-বৈশাখী রোড শো-তে না আসায় নিজেরাই কর্মসূচি শুরু করে দেয় বিজেপি নেতৃত্ব।  মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের উপস্থিতিতে শুরু হয় রোড শো।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন বিজেপির রোড শোতে অংশ নেননি  শোভন বৈশাখী?

বিজেপি সূত্রের খবর, রবিবার রাত দুটো পর্যন্ত শোভন-বৈশাখীর গোলপার্কের ফ্ল্যাটে রোড শো নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু সূত্রের খবর, সোমবার সকালে আচমকাই বৈশাখী ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, তিনি রোড শো-তে যাচ্ছেন না। কারণ, পার্টি থেকে বলা হয়েছে, এটা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল।  তিনি যে অপমানিত বোধ করেছেন আমন্ত্রিত না হয়ে, সেটাও গোপন করেননি বৈশাখী। প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বিজেপিতে যোগদান থেকে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক, সব জায়গাতেই শোভন-বৈশাখী ছিলেন একসঙ্গে। সেখানে বৈশাখীর হাজির হওয়ার কথা থাকলেও কেন তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হল যে, তিনি যাবেন না? সেই প্রশ্নেই বেঁকে বসেন শোভন। অন্যদিকে, বিজেপি পার্টি অফিসে তাঁদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।