কলকাতা: ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি।  মোদি-ঝড়ে ১৮ আসন জিতেছিল তারা। লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভাওয়ারি ফলাফল অনুযায়ী, তৃণমূলের ঘাড়ে প্রায় নিঃশ্বাস ফেলছিল বিজেপি। কলকাতার ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনেও সামান্য ব্যবধান এগিয়েছিল তৃণমূল। এরইমধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের অন্দরে সমীকরণ বদলে যায়। ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন একদা মমতা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা নির্বাচনে পুরানো কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরে দলের বিশ্বস্ত সৈনিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেন মমতা।  ভবানীপুরে তৃণমূলের গড় রক্ষার গুরুভার পড়ে শোভনদেবের কাঁধে। যৌবনে বক্সার ছিলেন তিনি। রাজনীতির মঞ্চে তাঁর কুশলী পাঞ্চে ধরাশায়ী হয়ে যান তৃণমূল-ত্যাগী বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ। বড় ব্যবধানে জয়ী হন শোভনদেব। লড়াইটা কিন্ত একেবারেই সহজ ছিল না। কিন্তু পোড়খাওয়া নেতা শোভনদেবই শেষপর্যন্ত বাজিমাৎ করেন। 
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে বিধানসভায় নির্বাচিত হতে হবে। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীর জন্য পুরানো কেন্দ্র ছাড়লেন শোভনদেব। ভবানীপুরের বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলেন তিনি। বললেন, মুখ্যমন্ত্রীকে জিতে আসতে হবে। তাই ভবানীপুর আসন থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি।
বরাবরই দলের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সৈনিক শোভনদেব। তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর তিনিই দলের প্রথম বিধায়ক। ১৯৯৮-এ রাসবিহারী আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য, তৃণমূলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা –সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। বিধানসভায় প্রথম তৃণমূল সরকারের চিফ হুইপ ছিলেন তিনি। ২০১৬-তে  তৃণমূলের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর বিদ্যুৎ মন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি। 
তরুণ বয়সে বক্সার শোভনদেব প্রবীন শ্রমিক নেতা। বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। 
১৯৯১-তে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বারুইপুরপ আসন থেকে জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯৬-তেও ওই আসন থেকে কংগ্রেস বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮-এ বারুইপুর ছেড়ে রাসবিহারী আসন থেকে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেব জয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১, ২০১৬-তেও জয়ী হয়েছিলেন। এবার পুরানো কেন্দ্র ছেড়ে ভবানীপুরে প্রার্থী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্গ দক্ষতার সঙ্গে রক্ষা করেছেন। এবার  বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে এই আসন দলনেত্রীর জন্য ছেড়ে দিলেন তিনি।