কলকাতা: অগ্রিম দিতে দেরি করায় রোগী ভর্তিতে অরাজি। অবশেষে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু রোগীর। ডিসান হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের স্বাস্থ্য কমিশনের।
মামলার শুরুতেই ১০ লক্ষ টাকা জমা রাখতে ডিসান হাসপাতালকে নির্দেশ রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, ‘মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের থেকে অগ্রিম নয়। রোগী ভর্তির সময় অগ্রিম নিতে পারবে না ডিসান। জানিয়ে দিল স্বাস্থ্য কমিশন।
কমিশন আরও জানিয়েছে, ‘ডিসানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। হাসপাতালের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা উচিত ছিল। অনেক রোগী চিকিৎসাধীন, তাই সাসপেন্ড করা হল না।’ মন্তব্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
ঘটনাটি ঘটে গত ১২ অগাস্ট। মৃত লায়লা বিবি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা। পরিবারের দাবি, ওইদিন সকালে তাঁর কোভিড টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিসান হাসপাতালে গিয়ে রোগিণীর পরিবার ৫০ হাজার টাকা টোকেন মানি জমা দেন। রাত নটায় আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসান হাসপাতালে।
পরিবারের অভিযোগ, একজন চিকিৎসক এসে দেখে যাওয়ার পর ডিসান হাসপাতালের তরফে বলা হয়, রোগী ভর্তি করতে গেলে ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সেদিনের মতো তাঁদের ডেবিট কার্ড থেকে টাকা তোলার লিমিট শেষ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, সেকথা শুনতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এরপর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আরও ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু মোট ৮০ হাজার টাকা জমা দিলেও রোগীকে ভর্তি করতে চায়নি ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ, তারা সাফ জানিয়ে দেয়, পুরো ৩ লক্ষ টাকা জমা না দিলে চিকিৎসা শুরু করা হবে না। পরিবারের তরফ থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়।
অভিযোগ, সেই অনুরোধও নাকচ করে দেয় ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর নিরুপায় হয়ে দুবাইয়ে থাকা এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহিলার পরিবার!
রাত সাড়ে ৯টা ডিসান হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে আরও ২ লক্ষ টাকা অনলাইন ট্রান্সফার করা হয়।
রাত দশটা টাকা ট্রান্সফারের কথা স্বীকার করে ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাত ১০টা ২০ অবশেষে এক চিকিত্সক অ্যাম্বুলান্সের কাছে আসেন রোগীকে দেখতে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
চলতি মাসের শুরুতেই রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন অ্যাডভাইসরি জারি করে বলেছিল, ভর্তির সময় রোগীর চিকিত্সা বাবদ সম্ভাব্য খরচের ২০ শতাংশের বেশি টাকা নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। রোগী ভর্তির সময় পরিজনরা অগ্রিম টাকা দিতে না পারলে ১২ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। রোগীকে তৎক্ষণাৎ ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
অর্থাত্ মৃতের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কমিশনের সবকটি নির্দেশিকাই লঙ্ঘন করেছে ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আনন্দপুর থানায় ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। এরপরই স্বতপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।