মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেতুর রেলিং ভেঙে খালে পড়ল যাত্রীবাহী বাস। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার ছত্রিশ জনের মৃতদেহ। সনাক্ত ১৪টি দেহ।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার এই বাসটি করিমপুর থেকে মালদা যাচ্ছিল। মাঝপথে দৌলতাবাদ থানার বালিরঘাটে নলিনী বাস্কে সেতুর ওপর ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা! রেলিং ভেঙে গোবরা খালের জলে পড়ে যায় সরকারি বাসটি।
বাস খালে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে যান সেতুর ওপরে। দিশেহারা মানুষ ছুটোছুটি শুরু করে দেন। তখন নীচে খালের জলে কোনওমতে সাঁতরে বাঁচার চেষ্টা করছেন দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাস থেকে বাইরে আসতে পারে যাত্রীরা।
প্রচণ্ড গতিতে সেতুর ওপর থেকে নীচে পড়া! তাতে আবার ভিতরে ঠাসা যাত্রী! ফলে সঙ্গে সঙ্গে জলের অনেকটা গভীরে ডুবে যায় বাসটি! বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল না বাসের এতটুকু অংশও! দুর্ঘটনার পর প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
অভিযোগ, প্রথম দিকে প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও তৎপরতা ছিল না। উদ্ধারকাজ নিয়ে দানা বাঁধে ক্ষোভ। কিছুক্ষণ পর পুলিশের ওপর আছড়ে পড়ে সেই রাগ! পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। চলে ভাঙচুরও।
মুর্শিদাবাদে বাস দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই তৎপর হয় সরকারের শীর্ষ মহল। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। যায় বিপর্যয় মোকাবিলা দল। খালে নামানো হয় বেশ কয়েকটি নৌকা। উদ্ধারে নামানো হয় ডুবুরি। কনকনে ঠাণ্ডা জলের মধ্যেই চলে তল্লাশি।
কয়েক ঘণ্টা পর খালের জল থেকে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হন বেশ কয়েকজন। বাসের মধ্যে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য কলকাতা থেকেও আনা হয় ডুবুরি।
বিকেলে দৌলতাবাদ পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জোরকদমে শুরু হয় খাল থেকে বাস তোলার কাজ। আনা হয় ক্রেন। প্রথমে আনা হয় একটি। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় চারটিতে। কিন্তু বারবার ক্রেনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় আবার কখনও আঙটা খুলে যাওয়া থমকে যায় উদ্ধার কাজ।
বাসের কাছে পৌঁছে যায় নৌকা ও স্পিড বোট। হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দমেননি উদ্ধারকারীরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা চেষ্টা চালান, যদি কাউকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে বিকেলে বাসটিকে তোলা সম্ভব হয়। দু’দিক থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসে ঢোকেন জাতীয় ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরা। বাস থেকে বের করা হয় একের পর এক মৃতদেহ! খালের পাড়ে তখন লাশের পাহাড়!
শিশুর পাশাপাশি মৃত বাসযাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা রয়েছেন। মৃতদেহগুলি উদ্ধারের পর নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ময়নাতদন্ত হয়।