গঙ্গারামপুর (দক্ষিণ দিনাজপুর): ‘নাম করে বলছি, কৈলাশ-অমিত বহিরাগত, দিলীপ-আকাশ গুন্ডা।’ গঙ্গারামপুরে বিস্ফোরক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 'ভাইপো-কটাক্ষের' জবাবে তাঁর ওপেন চ্যালেঞ্জ, বুকের পাটা থাকলে তাঁর নাম নিয়ে আক্রমণ করুক বিজেপি।


এদিন নাম করে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও অমিত শাহকে বহিরাগত এবং কৈলাশ-পুত্র আকাশ ও দিলীপ ঘোষকে গুন্ডা বলে কটাক্ষ করেন। বলেন, ‘কৈলাস বহিরাগত, আকাশ বিজয়বর্গীয় গুন্ডা, দিলীপ ঘোষ গুন্ডা। অমিত শাহ বহিরাগত, দিল্লির নেতারা বহিরাগত।’


সেইসঙ্গে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বুকের পাটা নেই বলে তাঁর নাম করছে না তৃণমূল।’ ‘এখন অনেকে সততার মূর্তি হতে চাইছেন। বাংলা কি নরেন্দ্র মোদির হাতের মোয়া ? মধ্যপ্রদেশ, বিহারে কোনও চোর ধরা পড়ে না। কারণ এই রাজ্যগুলিতে বিজেপি সরকার। কাকে টাকা নিতে দেখেছিলেন, তোলাবাজ কে ?’


তাঁর উদ্দেশ্যে যে তোলাবাজ কটাক্ষ করা হয়, এদিন সেই নিয়েও জবাব দেন অভিষেক। বলেন, ‘বলছে তোলাবাজ ভাইপো হঠাও। আমার তোলাবাজি প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে দিন। মৃত্যুবরণ করব, ইডি-সিবিআই লাগাতে হবে না।’


বহিরাগত ইস্যুতেও বিজেপিকে একহাত নেন অভিষেক। সভা থেকে বলেন, ‘আমাকে বলছে বহিরাগত, আমি ব্রাহ্মণ সন্তান, আমি বহিরাগত। অথচ কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাংলা বলতে জানেন না। সাংসদের প্রশ্ন, ‘তাহলে কে বহিরাগত ? অভিষেকের মতে, ‘শুধুই চাটুকারিতা চলছে। চলবে না অন্যায়, ফিরবে না ফন্দি, জনগণের আদালতে হতে হবে বন্দি।’


বিজেপির উদ্দেশ্যে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ‘উন্নয়নের নিরিখে মমতা বনাম মোদি রিপোর্ট কার্ড পেশ করুন। গো হারা হারবে বিজেপি। বাংলা গুজরাতের তল্পিবাহকতা করবে না। বাংলা দিল্লির কাছে মাথা নত করবে না।’


অভিষেকের হুঙ্কার, ‘আগামীদিনে বহিরাগতদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন। রবীন্দ্রনাথকে সম্মান করে না, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে তাদের চাই না। তাঁর কটাক্ষ, ‘বিজেপি এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কালকেই ক্ষমতা আসবে। দিল্লি পরিচালনা করবে গঙ্গারামপুর, মেদিনীপুর, কোচবিহারকে?


এদিনের সভা থেকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও আক্রমণ করেন অভিষেক। বলেন, ‘বেইমান হোক বা ডাকাত কেউ ছাড়া পাবে না। সব বেইমান, ডাকাত বিজেপিতে ঢুকে গেছে। আপনি উপসর্গহীন বেইমান, দলের খেয়ে দলের সঙ্গে গদ্দারি করেছেন।


তিনি যোগ করেন, ‘বলেছিলাম বাড়িতে পদ্মফুল ফোটাতে পারোনি। সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাইকে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছ। তার মানে বাড়িতে আরও উপসর্গহীন রয়েছে। পদ্মফুল শুকিয়ে যাবে, ঘাসফুল কাটলে আরও বাড়বে। বেইমানি, পাল্টিবাজি করে বিজেপিতে বাঁচার চেষ্টা চলছে।’


বলছে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের অবদান নেই। নেতাজি না থাকলে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি হত না। বাংলাকে কলুষিত করলে আগামীতে কড়ায় গন্ডায় জবাব। পদ নয় পতাকা, নেত্রীর নাম মমতা।’


দক্ষিণ দিনাজপুরের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।


স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বাংলার মসনদে ফের আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। বললেন, ‘দিল্লি-গুজরাতের কাছে বাংলাকে বিক্রি করার চেষ্টা, লাভ হবে না। নবান্নে ফের হাওয়াই চটি।’


ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের দাবি, দক্ষিণ দিনাজপুরে আজকের সভা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিজেপিকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘যে কটা পদ্ম ২০১৯ সালে ফুটিয়েছিলেন, সব বানের জলে ভেসে যাবে। মে মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়ে ফলাফল ঘোষণা।’


অভিষেকের আহ্বান, ‘৫ মাস লড়াই করে মমতার হাত শক্ত করুন। মমতাকে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করুন।’ তাঁর আশ্বাস, আগামী ৫ বছর উন্নয়নের জোয়ার থেকে কোনও পরিবার বঞ্চিত হবে না।’


অভিষেকের অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে বাংলার কৃষ্টি নষ্টের চেষ্টা চলছে। বলেন, ‘বহিরাগতদের নিয়ে বাংলার কৃষ্টি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের পর বিজেপির কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী, বিজেপির বড় নেতাদের দেখা যায়নি।’


তাঁর দাবি, ‘মানুষের পাশে থেকেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ভোটের সময় বিজেপি, পরিষেবা দেওয়ার সময় তৃণমূল। অভিষেক বলেন, ‘১০ বছরে মমতা এখনও টালির ছাদওয়ালা বাড়িতে থাকে। নরেন্দ্র মোদি এখন ৬ কোটির টাকা গাড়িতে চড়েন। মমতা আগের গাড়িতেই চড়েন, মমতার জীবনযাপন একই আছে।’


বিজেপির পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারকেও এক নিঃশ্বাসে আক্রমণ করেন অভিষেক। বলেন, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, চিন যদি ভারতের ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করে তাহলে তাদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেওয়া হবে।’


ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাত ইস্যুও এদিন উঠে আসে অভিষেকের বক্তৃতায়। বলেন, ‘গালওয়ানের ভ্যালির কী অবস্থা, অথচ চুপ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ। তাঁর প্রশ্ন, ‘চিনকে জবাব দেওয়া হবে না ?’


তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই পাকিস্তানের লাল চোখ গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক। ভারতের জমি কোনও দেশ দখল করতে চাইলে রুখে দাঁড়াতে হবে।’


জওয়ানদের নিয়ে বিজেপি সরকার রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ তোলেন অভিষেক। বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জওয়ানদের নিয়ে রাজনীতি। নির্বাচন চলে গেলে জওয়ানদের ভুলে যায়। বিজেপিকে বিদায় করতে হবে।’


এখানেই থেমে থাকেননি অভিষেক। বলেন, ‘নোটবন্দির পর ৪ বছর পেরিয়েছে জিডিপির পতন হয়েছে। নোটবন্দি, জিএসটিতে ব্যাঙ্কের বাইরে ছিল ভয়ের লাইন। আর দুয়ারে সরকারে লাইন বিনম্রতার।’