সোমনাথ দাস, তুহিন অধিকারী, পূর্ণেন্দু সিংহ: কেঁচো খুড়তে একেবারে কেউটে। অসুস্থ সাজিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীভর্তিতে অভিযুক্ত একটি নার্সিংহোমের ছিল না লাইসেন্স। বাঁকুড়ার ওই নার্সিংহোম বন্ধ করে দিল প্রশাসন। অপর দুই নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তি নিতে পারবে না।
সুস্থকে অসুস্থ সাজিয়ে নার্সিংহোমে রেখে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থেকে তুলে নেওয়া হত হাজার হাজার টাকা। বাঁকুড়ার ওন্দা ও সোনামুখীর তিন নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে উঠেছিল এমনই গুরুতর অভিযোগ। তদন্তে নেমে চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা প্রশাসনের। গত তিন সপ্তাহ ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল ওন্দার মা আনন্দময়ী নার্সিংহোম।
শুক্রবার থেকে নার্সিংহোম বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। সোনামুখীর যে দুই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল, তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে ভর্তি নিতে পারবে না তারা। বাঁকুড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করি। রিপোর্টও হাতে চলে এসেছে, নার্সিংহোমের এখন নবীকরণ করেনি লাইসেন্স, আইনত ব্যবস্থা নেব। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পর অদ্ভুত সাফাই অভিযুক্ত নার্সিংহোমগুলির। মা আনন্দময়ী নার্সিংহোমের কর্মী সঞ্জু আদকের দাবি, ১৫-২০ দিন রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ।
গত মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের এক বাসিন্দা অভিযোগের ভিত্তিতে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোয়ালতোড়ের ৫০-৬০ জনকে ভর্তি করিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর টাকা নার্সিংহোমগুলি হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী বাপি রুইদাস বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পিন্টু রুইদাস লোভ দেখায়, বলে ৯ দিন থাকলে ১০ হাজার টাকা দেব, বুঝতে পেরে যেতে দিইনি, মাকে নিয়ে গেছিল ১ লক্ষ ২৪ টাকা হয়েছে। আরেক অভিযোগকারী অচিন্ত্য বেরার কথায়, ৭-১০ দিন ওষুধ দিয়ে রাখল, তেমন কোনও চিকিৎসা করেনি, টাকা নিয়ে প্রশ্ন করলে কথাই বলেনি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তিন নার্সিংহোমে যাঁরা ভর্তি ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা। দুই জেলা থেকে নার্সিংহোমগুলির দূরত্ব অনেকটাই। বিষ্ণুপুরের একাধিক নার্সিংহোম পেরিয়ে যেতে হয় ওন্দায়। তাহলে কেন বিষ্ণুপুর পেরিয়ে এতজন রোগী ওন্দা ও সোনামুখীর নার্সিংহোমে ভর্তি হলেন? তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।