গাইঘাটা:  কী অবস্থা?
                কেমন আছিস?
                খাওয়া-দাওয়া করেছিস?
                 ঠিক আছিস তো?

হোয়াটসঅ্যাপে ওইটুকুই কথোপকথন। এর বেশি কথাও বলা যাচ্ছে না। যোগাযোগও হচ্ছে না বেশিরভাগ সময়। ঘরের ছেলে আটকে তালিবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানে। এদিকে দিনভর ছটফট করছে পরিবার। কীভেবে কখন বাড়ি ফিরতে পারবে সে, কেউ কিচ্ছু জানে না। সঙ্গী শুধুই উত্কণ্ঠা। 

দু’দশকের যুদ্ধ শেষে ফিরে গেছে আমেরিকা। ফের অরাজকতার অন্ধকারে জালালুদ্দিন রুমির দেশ! কাবুলের বাতাস বারুদের গন্ধে ভারী। যে কোনও মুহূর্তে ছুটে আসতে পারে তালিবানি বুলেট! তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য আফগানিস্তানে যাওয়া ভারতীয়রা যেভাবেই হোক দেশে ফিরতে চাইছেন। তীব্র উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের পরিজনদের।
ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতির মাঝেই অনেকের মতো আটকে পড়েছেন এক বঙ্গসন্তান। শঙ্কর সিংহ রায়। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার শঙ্কর সিংহ রায় এখনও কাবুল এয়ারপোর্ট চত্বরেই আটকে। যত সময় গড়াচ্ছে পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। 

শঙ্কর সিংহ রায়ের বাবার গলায় আক্ষেপ, এখানে কাজ নেই, তাই ছেলেকে ওখানে যেতে হল ! জানালেন, সামান্য কথা হচ্ছে। অবস্থা জানাচ্ছেন শঙ্কর। কাবুল এয়ারপোর্ট চত্বরে কী ভীষণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মঙ্গলবারই হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে এবিপি আনন্দকে দেখিয়েছিলেন শঙ্কর।


সংসারের হাল ধরতে ২০১৬ সালেই দেশ ছাড়েন শঙ্কর। কাজ করেছেন ইরাকের মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত আরেক দেশে। কিন্তু, আফগানিস্তানের এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ানক! বলছেন বাড়ির লোকেরাও। ছেলের চিন্তায় বুক ফাটছে মা স্বপ্নার। শুধু বলছেন, আর কিছু চাই না, ছেলেটা ফিরুক আগে। 


কর্মসূত্রে কাবুলে আটকে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোক নগরের বাসিন্দা অজয় মজুমদারও। চরম দুশ্চিন্তায় পরিবার। বিধ্বস্ত কাবুল! বিধ্বস্ত সেই পরিবারগুলিও, যাঁদের আপনজন এখনও আটকে আফগানিস্থানে।

এই প্রেক্ষাপটে, কর্মসূত্রে আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা বাংলার বাসিন্দাদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য স্বজনহীন দূর দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন এই মানুষগুলো। ফিরলেন একরাশ আতঙ্ক বুকে নিয়ে।