সব মিলিয়ে রবিবারটা এই পর্বতারোহীদের পরিবারের কাছে যতটা স্বস্তির ছিল, সোমবারটা ঠিক ততটাই উৎকণ্ঠার এবং যন্ত্রণার। শনিবার দীর্ঘক্ষণ ধরে এভারেস্টে চার বাঙালি পর্বতারোহীর কোনও খোঁজ ছিল না। এরা হলেন-- সুনীতা হাজরা, সুভাষ পাল, গৌতম ঘোষ এবং পরেশ নাথ।
রবিবার দুপুরে সরকারি সূত্রে খবর মেলে চারজনকেই শৃঙ্গের কাছাকাছি জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সেখান থেকে ক্যাম্প ফোরে নামিয়ে আনা হয়। সুভাষ পাল এবং সুনীতা হাজরা, দু’জনেরই অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। সোমবার সুভাষ এবং সুনীতাকে ক্যাম্প ফোর থেকে ক্যাম্প টু-তে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কিন্তু, সাত হাজার মিটারের ওপরে কয়েক ফুট চলা যে কতটা দুঃসাধ্য, তা কল্পনাও করাও কঠিন। খাবার নেই, অক্সিজেন নেই। আর উল্টোদিক থেকে ফুসফুস জমিয়ে দেওয়ার মতো কনকনে হাওয়ার ঝাপটা। এই ধকলই আর সইতে পারেননি সুভাষ পাল। ক্যাম্প টু-তে পৌঁছনোর আগেই তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অভিযাত্রী দলের এই চার সদস্যের মধ্যে তিনিই একমাত্র এভারেস্ট শৃঙ্গ ছুঁয়েছিলেন। সেই গর্ব নিয়ে শৃঙ্গের বুকেই বরফ-সমাধি ঘটে এভারেস্ট-জয়ী সুভাষের। ছেলের এই পরিণতির কথা শুনে বাঁকুড়ার বাড়িতে ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা। সুভাষের সহ অভিযাত্রী সুনীতা হাজরার শরীরের অবস্থা খারাপ হলেও, তাঁকে কাঠমান্ডুতে আনা গিয়েছে।
ক্যাম্প ফোর থেকে কিছুটা রাস্তা দড়ি দিয়ে টেনে, কিছুটা মই দিয়ে সুনীতাকে ক্যাম্প টু-তে নামিয়ে আনা হয়। ক্যাম্প টু পর্যন্তই হেলিকপ্টার উড়তে পারে। ক্যাম্প টু থেকে সুনীতাকে কপ্টারে করে বেস ক্যাম্পে আনা হয়। সেখানে হিমালয়ান রেসকিউ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবার কপ্টারে করে বেস ক্যাম্পে। তারপর লুকলা হয়ে কাঠমান্ডুতে। এর মাঝে একবার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন সুনীতা।
তবে সুনীতা ফিরলেও, এখনও খোঁজ নেই পর্বতারোহী গৌতম ঘোষ এবং পরেশ নাথের। রবিবার বিকেলে তাঁদের ক্যাম্প টু-তে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়ের পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও তাঁরা সেখানে পৌঁছননি। এই খবরে বেস ক্যাম্পেও দুশ্চিন্তার বাতাবরণ ছড়িয়েছে। কারণ, দু’জনের কাছেই তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যা দিয়ে খুব জোর ১২ ঘণ্টা চলতে পারে। কিন্তু, সেই রসদ নিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ থাকাটা যথেষ্টই আশঙ্কার।
প্রার্থনা এখন একটাই। শৃঙ্গজয়ের গর্ব নিয়ে ঘরের মানুষগুলো সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসুক।