ঝিলম করঞ্জাই ও রুমা পাল, কলকাতা: কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে দেশে। দৈনিক সংক্রমণ থেকে মৃত্যু, কোনও কিছুই বাগে আনা যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়িয়েছে মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। এতদিন মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত বা
কর্ণাটকের মতো রাজ্যে হানা দেওয়ার পর এবার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে মিউকোরমাইকোসিস হানা দিল বাংলায়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত চারজন রোগীর সন্ধান মিলল এই রাজ্যে।
যদিও এঁদের মধ্যে দু’জন ঝাড়খণ্ড ও দু’জন বিহারের বাসিন্দা। চার রোগীর মধ্যে তিনজনই দিশা চক্ষু হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। চতুর্থজন চিকিত্সা সংক্রান্ত নথি পাঠিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু কী এই মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ?
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটি আসলে ছত্রাকজনিত রোগ। তবে এই রোগের সংক্রমণ মোটেও নতুন কিছু নয়। বিশেষত যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রয়েছে, এইচআইভি বা ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত, নিয়মিত স্টেরয়েড নেন বা বা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, তাঁরাই এই ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এ রাজ্যেও যে চারজন মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যকেই আগে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন।
চিকিত্সক অজয় সরকার বলেন, ভারতে বেশকিছু রাজ্যে কোভিডদের সুস্থ হওয়ার পর এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে। চণ্ডীগড়ে এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। শরীর দুর্বল হওয়ার ফলে এটা মাথাচারা দিয়ে ওঠে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছে, মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্তদের মধ্যে চোখের সমস্যা, স্নায়ুর সমস্যা, কোভিড সেরে যাওয়ার পরেও কাশি না কমা, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিচ্ছ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় মতো চিকিত্সা না করলে, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্নায়ু প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ রাজ্যে যে চার রোগীর সন্ধান মিলেছে, তাঁদের সকলেরই দৃষ্টিশক্তি প্রায় চলে গিয়েছে।
কিন্তু কীভাবে আমাদের শরীরে ঢুকে পড়ে এই ফাঙ্গাস? কীভাবেই বা সতর্ক থাকা যায়?
চিকিত্সক কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলে ছত্রাক জন্মায় বাড়তে থাকে ও শরীরে প্রবেশ করে। অক্সিজেনের সিলিন্ডারে জলের মধ্যে হিউমিডিফায়ার যার মধ্যে জল থাকে, সেই জল নিয়মিত পরিষ্কার না করলে নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ছত্রাক জন্মায়। সেখান থেকে শরীরে প্রবেশ করে। নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখা দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সমক্রমণ করোনার মতো দেশজুড়ে ছেয়ে গিয়েছে তেমনটা নয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিত্সকদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।